মুক্তাগাছার রাজবাড়ির ইতিহাস
মুক্তাগাছা জমিদারীর প্রতিষ্ঠাতা শ্রীকৃষ্ণ আচার্য চৌধুরীর তৃতীয় পুরুষ রঘুনন্দন আচার্য চৌধুরী নিঃসন্তান ছিলেন। গৌরীকান্ত আচার্য চৌধুরীকে দত্তক নিলেন রঘুনন্দন। দত্তক পুত্রের হাতে জমিদারীর ভার দিয়ে কিছুদিনের মধ্যেই মারা যান তিনি।
জমিদার গৌরীকান্ত আচার্য চৌধুরীও সন্তানহীন অবস্থায় অকালভাবে মারা যান। গৌরীকান্তের বিধবা পত্নী বিমলা দেবী দত্তক নিলেন কাশীকান্তকে। কাশীকান্তের কপালও মন্দ ছিল। দীর্ঘ রোগযন্ত্রনায় ভুগে সন্তানহীন অবস্থায় পরলোক গমন করলেন তিনিও! তার বিধবা পত্নী লক্ষ্মী দেবী আচার্য চৌধুরানী পূর্বসুরীদের পথ অনুসরণ করে দত্তক নিলেন চন্দ্রকান্তকে! চন্দ্রকান্তও তাড়াতাড়ি মারা যায়।
লক্ষ্মী দেবী আবারও দত্তক নিলেন। দ্বিতীয় দত্তক পুত্রের পূর্বনাম পূর্ণচন্দ্র মজুমদার। নতুন নাম পুত্রের রাখলেন- সূর্যকান্ত আচার্য চৌধুরী!
সূর্যকান্ত আচার্য চৌধুরীর শাসনামলে ব্রহ্মপুত্র তীরবর্তী জনপদে যুক্ত হল সোনালি মাত্রা। প্রায় একচল্লিশ বছর জমিদারী পরিচালনার জনহিতকর কাজ করলেন তিনি। ময়মনসিংহে স্থাপন করলেন একাধিক নান্দনিক স্থাপনা। উনবিংশ শতকের শেষ দিকে ময়মনসিংহ শহরের কেন্দ্রস্থলে ৯ একর ভূমির উপর একটি অসাধারণ দ্বিতল ভবন নির্মাণ করলেন তিনি।
মুক্তাগাছার রাজবাড়িতে রয়েছে, শান বাঁধানো প্রবেশপথের সামনেই শশী লজের সাজানো বাগান। বিচিত্র প্রজাতির ফুল শোভিত সেই বাগানের মধ্যভাগে বৃত্তাকার জলফোয়ারা। ফোয়ারার কেন্দ্রস্থলে অনুচ্চ বেদীর উপর দণ্ডায়মান গ্রীক স্থাপত্য রীতিতে নির্মিত নারীর মূর্তি। বাগানের পেছনে লালচে ইট আর হলুদ দেয়ালে নির্মিত শশী লজ।
১৮৯৭ সালের ১২ জুন ভূমিকম্পে ভবনটি বিধ্বস্ত হয়। ১৯০৫ সালে একই জায়গায় পরবর্তী জমিদার শশীকান্ত আবার ভবন তৈরি করেন। ভবনের মূল ফটকে রয়েছে ১৬টি গম্বুজ। ভেতরের প্রায় ৩৬টি ঘরের প্রতিটিতেই ছাদ থেকে ঝুলছে ঝাড়বাতি। ভবনের ভেতরে আছে মার্বেল পাথরের ফোয়ারা। ভবনের পেছন দিকে রয়েছে গোসলের জন্য দোতলা গোসলখানা।
ভবনের সামনে বাগানের মাঝখানে আরেকটি শ্বেতপাথরের ফোয়ারা। সুপ্রাচীন এই ভবনের পূর্বপ্রান্তের ঘরটি বর্তমানে প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের অধ্যক্ষের কার্যালয় হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে। বারান্দা অতিক্রম করে কয়েক ধাপ সিঁড়ি পেরোলেই রঙ্গালয়। রঙ্গালয়ের একপ্রান্তে বিশ্রামঘর। বিশ্রামঘরের পর কাঠের মেঝেযুক্ত হলঘর। হলঘরের পাশেই বর্ণিল মার্বেল পাথরে নির্মিত আরেকটি জলফোয়ারা। জলফোয়ারার ঠিক উপরের ছাদ থেকে নীচে ঝোলানো স্ফটিকস্বচ্ছ কাঁচের ঝাড়বাতি।
“ভয়েস অফ হ্যালো”র ফেসবুক ক্লিক করুন
“ভয়েস অফ হ্যালো”র ইউটিউব ক্লিক করুন
[শিশুরাই তুলে ধরবে শিশুদের অধিকারের কথা, আপনিও লিখুন আপনার কথা। লেখা পাঠানোর ঠিকানা [email protected]]
Comments are closed.