গণিতশাস্ত্রে অবদান রেখেছেন যেসব মুসলিম বিজ্ঞানী

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি দাঁড়িয়ে আছে গণিতের ওপর। গণিতই আধুনিক বিজ্ঞানের প্রাণসত্তা। মানবসভ্যতার জন্য অতি প্রয়োজনীয় এই গণিতচর্চা। প্রাচীনকালে মুসলিম বিজ্ঞানীরা বিজ্ঞানের যেসব মৌলিক শাখায় অবদান রেখেছেন গণিতশাস্ত্র তার অন্যতম। গণিতশাস্ত্রের উন্নয়নে যুগে যুগে মুসলিম বিজ্ঞানীরা অভূতপূর্ব অবদান রেখেছেন। মুসলিম বিজ্ঞানীরা যেমন গ্রিক ও ভারতীয়দের আবিষ্কৃত গণিতের সূত্রগুলো বিশ্লেষণ ও উন্নয়ন করেছেন। তেমনি গণিতশাস্ত্রে নিত্যনতুন তথ্য ও শাখা যুক্ত করেছেন।

গণিতশাস্ত্রে অবদান রেখেছেন এমন কয়েকজন মুসলিম বিজ্ঞানী:

আল-খাওয়ারিজমি : আবু আবদুল্লাহ মুহাম্মদ ইবনে মুসা আল-খাওয়ারিজমির জন্ম মধ্য এশিয়ায়। মুসলিম বিজ্ঞানীদের মধ্যে গণিতশাস্ত্রে সবচেয়ে বেশি অবদান রেখেছেন তিনি। তাকে বলা হয় আধুনিক বীজগণিত তথা অ্যালজেবরার জনক। তার বই ‘কিতাবুল জাবার ওয়াল মুকাবিলা’কে অ্যালজেবরা বা বীজগণিতের উৎস গণ্য করা হয়।

আধুনিক বিজ্ঞানের প্রাণসত্তা বলা হয় তার আবিষ্কৃত বীজগণিতকে। কেননা আধুনিক যুগের প্রায় সব কিছু এই বীজগণিতের ওপর নির্ভর করে আবিষ্কৃত হয়েছে। পাটিগণিত বিষয়েও একটি বই রচনা করেন তিনি। যা পরে লাতিন ভাষায় অনূদিত হয়।

আল-কারজি: আল-খাওয়ারিজমির বীজগণিতের ধারণার প্রসার ঘটান আল-কারজি। প্রথম ব্যক্তি হিসেবে বীজগণিতকে জ্যামিতিক ক্রিয়াকলাপ থেকে সম্পূর্ণভাবে আলাদা করেন তিনি এবং পাটিগণিতের সাথে বীজগণিতের যোগসূত্র তৈরি ও ব্যাখ্যা করেন। যা আধুনিক বীজগণিতের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ মূলভিত্তি। প্রথম বীজগণিতের সূচক আবিষ্কার করেন আল-কারজি।

আল-বেরুনী: আল-খাওয়ারিজমির পরেই গণিতবিদ হলেন আল-বেরুনীর স্থান। তার রচিত ‘আল-কানুন আল-মাসউদি’কে গণিতশাস্ত্রে তার শ্রেষ্ঠতম অবদান বলা হয়। গ্রন্থটিকে কেউ কেউ গণিতশাস্ত্রের বিশ্বকোষ বলে থাকে। আল-বেরুনী তার এই গ্রন্থে জ্যামিতি, ত্রিকোণমিতি, ক্যালকুলাস প্রভৃতি বিষয়ের সূক্ষ্ম, জটিল ও গাণিতিক সমস্যার সমাধান তুলে ধরেছেন। এছাড়া পরিমাপ পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করেছেন, যা আজও স্বীকৃত ও অনুসৃত।

ওমর খৈয়াম: কবি ও গণিতবিদ ওমর খৈয়ামের ব্যাপারে বলা হয় তিনি দিনে জ্যামিতি ও বীজগণিত পড়াতেন, সন্ধ্যায় মালিক শাহের দরবারে পরামর্শ দিতেন এবং রাতে জ্যোতির্বিজ্ঞান চর্চা করতেন। প্রথম উপবৃত্ত ও বৃত্তের ছেদকের সাহায্যে ত্রিঘাত সমীকরণের সমাধান করেন তিনি।

ওমর খৈয়ামের ‘মাকালাতু ফি আল জাবর ওয়াল মুকাবিলা’কে গণিতশাস্ত্রের গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থ মনে করা হয়। এই গ্রন্থে ঘাত হিসাবে সমীকরণের শ্রেণিকরণ করেন এবং দ্বিঘাত সমীকরণের সমাধানের নিয়মাবলি লিপিবদ্ধ করেন তিনি।

আল-বাত্তানি: আবদুল্লাহ আল-বাত্তানিকে খ্রিস্টীয় নবম ও দশম শতকের শ্রেষ্ঠ গণিতবিদ মনে করা হয়। গণিতশাস্ত্রের উন্নয়নে বিশেষ অবদান রাখেন তিনি। ত্রিকোণমিতির অনুপাত প্রকাশ আল-বাত্তানির মৌলিক অবদান। গণিতশাস্ত্র ইতিহাসে ত্রিকোণমিতিকে আল-বাত্তানিই সম্পূর্ণ স্বাধীন, স্বতন্ত্র ও পূর্ণাঙ্গভাবে প্রথম তুলে ধরেন। ত্রিকোণমিতির Sine, Cosine, Tangent, Cotangent ইত্যাদি সাংকেতিক নিয়মের তাৎপর্যপূর্ণ ব্যবহার প্রথম করেন আল-বাত্তানি।

উল্লিখিত, গণিতবিদরা ছাড়াও আল-সামাওয়াল বীজগণিতের অজানা রাশি নির্ণয়ের ব্যাখ্যা দেন। শারাফ আদ-দ্বিন সমীকরণের মাধ্যমে বক্ররেখাকে ব্যাখ্যা করার সূত্র আবিষ্কার করেন। সাবিত ইবনে কুরা সংখ্যাতত্ত্বের ওপর গুরুত্বপূর্ণ কাজ করেন। মুহাম্মদ বাকির ইয়ার্দি দুই সমধর্মী সংখ্যার জোড়া আবিষ্কার করেন। আবুল ওয়াফা বর্গমূল ও এর বিন্যাস আবিষ্কার করেন। আল-কাশি বাস্তব সংখ্যার দশমিক ভগ্নাংশের ধারণা সম্প্রসারণ করেন। সূত্র: ইকনা

“ভয়েস অফ হ্যালো”র ফেসবুক ক্লিক করুন
“ভয়েস অফ হ্যালো”র ইউটিউব ক্লিক করুন

[শিশুরাই তুলে ধরবে শিশুদের অধিকারের কথা, আপনিও লিখুন আপনার কথা। লেখা পাঠানোর ঠিকানা [email protected]]

Comments are closed.