দুই শিক্ষার্থী আর তিন শিক্ষকের স্কুল!

জামালপুরের ইসলামপুর উপজেলার নোয়ারপাড়া ইউনিয়নের করিরতাইর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক পাঁচজন রয়েছেন। খাতার হিসাবে সেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ১২০ জন শিক্ষার্থীকে পড়ান তারা। তবে সরেজমিনে বিদ্যালয়ে দেখা গেলো দুজন শিক্ষার্থী ও তিনজন শিক্ষক উপস্থিত রযেছেন।

গত রবিবার করিরতাইর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গেলে সংবাদমাধ্যম কর্মীদের দেখে অবাক হয়ে ওঠেন প্রধান শিক্ষক শামীমা খান ও সহকারী শিক্ষক সোহরাব আলী। এরপরে সহকারী শিক্ষক আব্দুর রৌফ আকন্দ পরে আসেন। সেইদিন বিদ্যালয়ের বাকি দুজন শিক্ষক এদিন অনুপস্থিত ছিলেন।

বিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষে গিয়ে দেখা মিলে, চতুর্থ শ্রেণির কক্ষে মিতানুর আক্তার ও পঞ্চম শ্রেণির কক্ষে শাকির হোসেন বসে আছেন।

বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের হাজিরা খাতায় দেখা যায়, প্রাক-প্রাথমিক শ্রেণিতে নয়জন, প্রথম শ্রেণিতে ২১ জন, দ্বিতীয় শ্রেণিতে ২১ জন, তৃতীয় শ্রেণিতে ১৯ জন, চতুর্থ শ্রেণিতে ১৭ জন এবং পঞ্চম শ্রেণিতে ২৩ জন ছাত্র-ছাত্রীর নাম লেখা রয়েছে। তবে সেইদিনের কোন হাজিরা দেখা মিলেনি।

আশরাফ হোসেন নামের এক স্থানীয় বাসিন্দা বলেন,  ‘কাজীর গরু কিতাবে আছে গোয়ালে নেই- এমন অবস্থা করিরতাইর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের। খাতায় ছাত্র-ছাত্রীর নাম আছে শুধু, ক্লাসে নাই। সরকার প্রতি মাসে শিক্ষকদের লাখ লাখ টাকা বেতন দিচ্ছে, অথচ আমগো পোলাপানের লেখাপড়া হচ্ছে না।’

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শামীমা খান বলেন , ‘পাশে একটি মাদ্রাসা থাকায় স্কুলে ছাত্র-ছাত্রী কমে গেছে। এ ছাড়া করোনার পর থেকে স্কুলে ছাত্র-ছাত্রী আসছে না।’

শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়মুখী করা বিষয়ে ইসলামপুর উপজেলা সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা এবং সেই বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি আবদুল গফুর খান বলেন, ‘ম্যানুয়ালি শিক্ষকদের হোম ভিজিট করার কথা রয়েছে।’

ইসলামপুর উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মোহাম্মদ ফেরদৌস বলেন, ‘ছাত্র-ছাত্রীদের বিদ্যালয়মুখী করতে ওই ক্লাস্টারের দায়িত্ব প্রাপ্ত সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা ও বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির সভাপতির মনিটরিং ও কর্তৃপক্ষের নিকট উপস্থাপন করার দায়িত্ব রয়েছে। শিক্ষকরা হোম ভিজিট করছেন কি না, ছাত্রছাত্রীরা স্কুলে আসবে কি না এ ব্যাপারে কোনো প্রতিবেদন এখন পর্যন্ত আমার কাছে উপস্থাপন করেননি সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা।’

ইসলামপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মু. তানভীর হাসান রুমান বলেন, ‘বিষয়টি আপনার মাধ্যমেই জানতে পারলাম, তবে খুবই দুঃখজনক। উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

তথ্য ও ছবি: সাহিদুর রহমান

আমাদের সময় ইসলামপুর (জামালপুর) প্রতিনিধি।

“ভয়েস অফ হ্যালো”র ফেসবুক ক্লিক করুন
“ভয়েস অফ হ্যালো”র ইউটিউব ক্লিক করুন

[শিশুরাই তুলে ধরবে শিশুদের অধিকারের কথা, আপনিও লিখুন আপনার কথা। লেখা পাঠানোর ঠিকানা [email protected]]