আব্বাজান আমার জীবনের সেরা

আমি আজকে যাকে নিয়ে লিখতে যাচ্ছি, তিনি হলেন আমার আব্বাজান। প্রতি শনিবার আমাদের এখানে বাজার বসে। গতকাল শনিবার বিকাল বেলা প্রাইভেট পড়ে আম্মু সাথে মামার বাসায় গেলাম, গিয়ে দেখি মামী গলদা চিংড়ি কাঁটছে। দেখে আমার ইচ্ছে করছে গলদা চিংড়ির মালাইকারি রান্না করে খাওয়ার জন্য। মামার বাসা থেকে আসার সময় ভেবেছিলাম আম্মুকে বলব আব্বুকে ফোন দিয়ে বলতে বাড়ি ফেরার সময় যেন গলদা চিংড়ি নিয়ে আসে।

আবার ভাবলাম না থাক লাগবে না, এমনি সংসারের সব খরচ তো আব্বুকেই করতে হয়। একা একটা মানুষ আর কত করবে আমাদের ইচ্ছে পূরণ। আম্মুও মাঝ রাস্তায় বলল চিংড়ি মাছগুলো অনেক বড় যা দামের তুলনায় অনেক ভালো ছিল। সেদিন রাতে ১০টায় আব্বু বাসায় আসেন আর প্রতিদিনের মতো আমিই দরজা খুলে দিয়েছিলাম।

তবে সেইদিন দরজা খুলে দিয়ে দেখি আব্বু সাথে ডান হাতে পলিথিনের ভিতরে গলদা চিংড়ি। আমি গলদা চিংড়ি দেখে তো মহাখুশি। কিন্তু খুব একটা অবাক হয়নি বিষয় টা দেখে আব্বুকে বললকে গলদা চিংড়ির কথা!!! আব্বু কিভাবে হঠাৎ আমার জন্য গলদা চিংড়ি নিয়ে আসল। কারণ এমন আগেও অনেক বার হয়েছে যে আমার কিছু খেতে ইচ্ছে করল আব্বুকে বলিনি কিন্তু তা আব্বু ঠিকই নিয়ে আসছে।

সেদিন পুরা মিরাক্কেল ঘটে। আব্বুকে বলি আমি আজকে আমার গলদা চিংড়ি খাওয়া ইচ্ছে করছিল। আর তা তোমাকে না বলতেই নিয়ে চলে এসেছো। এ কথা আব্বু শুনে বলল যে বাজারে গিয়েছিলাম তারপর দেখলাম গলদা চিংড়ি উঠেছে, আমি ভাবলাম চুমকী (আমি) তো গলদা চিংড়ি অনেক পছন্দ করে তার জন্য নিয়ে নেয়।

আমার আব্বাজান আমার সকল ইচ্ছে পূরণের মানুষ, ওনার কাছে বলি নি এমন কোনো কথা নাই আর বলার পার পাইনি এমন কোনো জিনিস আজ পর্যন্ত মনে হয়নি। তিনি আমার দেখা শেষ্ঠ মানুষ। তিনি আমাদের জন্য জীবনে অনেক কষ্ট করেন। তিনি আমাদের পরিবারে জন্য নিজের সব সুখ আহ্লাদ বিসর্জন দেয়। আমাদের পরিবারে ৫জন সদস্য। আর রোজগার করেন একজন, এই একজনের উপর পুরো সংসারের দায়িত্ব তা হলো আমার আব্বাজান।

তিনি খুব সাধারণ একজন মানুষ, ছোট-খাটো ব্যবসা করেন। এই ব্যবসা টাকা দিয়ে আমাদের এই ছোট সংসার চালান তিনি। আমি জানি খুব কষ্ট করে টাকা উপার্জন করে। তারপরেও আমাদের কোনো ইচ্ছে অপূর্ণ রাখেন নি। আমাদের দুই ভাই-বোনের পড়াশোনার খরচ তো আছেই। আমি ছোট, আমার বড় ভাই আছেন। আমার বড় ভাই প্রাইভেট ইউনিভার্সিটিতে পড়ে আর আমি নবম শ্রেণীতে পড়ি। আমার ভাইয়ের ও আমার পড়াশোনা খরচ কোনো কিছু তেই কমতি রাখেননি তিনি। তারপর তো আছে সংসার খরচ আম্মুর ওষুধ, আব্বুর নিজের ওষুধ ও বাসা ভাড়া।

সব কিছু এই একজনের আয়-রোজগারের উপর চলে। তারপরও আমাদের কাছে মুখ ফসকেও ওনার কষ্টের কথা শিকার আসেন না। যদি বার বার জিজ্ঞাসা করি তাহলে একটাই উত্তর তোদের মুখের হাঁসিই আমার সকল দুঃখ-কষ্ট দূর করে দেয়। তোরা সুখে থাকলে আমার সুখ। আমার তোরা ছাড়া আর কি আছে। আমার ধন-সম্পদ তো তোরাই। আমার ঘর নাই-বাড়ি নাই, জায়গা নাই। কোনো কিছুই নাই এই সব। আমার শুধু আছে একজন পরম মমতাময়ী, যিনি তোদের মা ও তোরা দুই ভাইবোন। আমি তোদের আগলে নিয়েই তো বেঁচে আছি।

সব শেষ এইটুকুই বলব আমার বাবা তিনি আমাকে বুকে নিয়ে রোদে পুড়ে, বৃষ্টিতে ভিজে…. চলতেন। আমার আব্বাজান আমার জীবনের সেরা একজন মানুষ। ভালো থাকুক পৃথিবীর সকল পিতা।

মেহেজাবীন চুমকী
নবম শ্রেণী, খায়রুল্লাহ সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, গফরগাঁও, ময়মনসিংহ।

“ভয়েস অফ হ্যালো”র ফেসবুক ক্লিক করুন
“ভয়েস অফ হ্যালো”র ইউটিউব ক্লিক করুন

[শিশুরাই তোলে ধরবে শিশুদের অধিকারের কথা, আপনিও লিখুন আপনার কথা। লেখার পাঠানোর ঠিকানা
[email protected]]

Comments are closed.