সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর লেখার পদ্ধতি

বাংলা প্রথম পত্র বিষয়ের সৃজনশীল প্রশ্নে প্রত্যেক উদ্দীপকে চিন্তন দক্ষতার চারটি স্তরের প্রশ্ন থাকে। (ক) জ্ঞানমূলক, (খ) অনুধাবনমূলক,(গ) প্রয়োগমূলক ও (ঘ) উচ্চতর দক্ষতামূলক এই চার ধরনের হয়ে থাকে। আজকের আলোচনায় কীভাবে সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর লিখতে হয় তা নিয়ে আলোচনা করা হবে।

(ক) জ্ঞানমূলক: অধ্যায়ের ভেতর থেকে যে বাক্যগুলো এককথায় প্রশ্নোত্তর হয় সেখান থেকে, শব্দার্থ থেকে এবং লেখক-পরিচিতি থেকে জ্ঞানমূলক প্রশ্ন করা হয়ে থাকে। এই স্তরের মানবণ্টন ১ হবে। যার ফলে খাতাতে শুধু একটি শব্দ দিয়ে জ্ঞান স্তরের উত্তর দেওয়া যাবে।

(খ) অনুধাবনমূলক: বইয়ের অধ্যায়ের আলোকে উদ্দীপক তৈরি করা হয়েছে সেই অধ্যায় থেকে প্রশ্ন হবে। এই স্তরের মান ২ লেখা থাকে। তবে দুটি অংশে উত্তর লিখা ভালো। প্রথম অংশে জ্ঞান স্তরের ১ নম্বরের জন্য একটি বাক্যে ভাবার্থে এবং দ্বিতীয় অংশে অনুধাবন স্তরের ১ নম্বরের জন্য বইয়ের নির্দিষ্ট অধ্যায়ের আলোকে দুটি থেকে চার বাক্যের মধ্যে উত্তর লিখবেন।

(গ) প্রয়োগমূলক: এই ধরনের প্রশ্নে উদ্দীপক ও বইয়ের কোনো অধ্যায়ের দিক বা চরিত্রের সাথে একত্র করে প্রশ্ন হবে। এই স্তরের মানবণ্টন ৩ (জ্ঞান স্তর= ১, অনুধাবন স্তর= ১ ও প্রয়োগ স্তর=১)। উত্তরে জ্ঞান স্তরটি লিখবে ভাবানুবাদে, অনুধাবন স্তরটি লিখবে বইয়ের নির্দিষ্ট অধ্যায়ের আলোকে এবং প্রয়োগ স্তরটি উদ্দীপক পড়ে নিজের ভাষায় বর্ণনা করতে হবে এবং শেষে বই ও উদ্দীপক উভয় জায়গাতে যে দিকটি ফুটে উঠেছে তা সংক্ষেপে মিলে লিখলে ভালো হবে। এভাবে তিনটি স্তর তিনটি প্যারায় লেখা উত্তম। তবে এতে জ্ঞান স্তর ঠিক না হলে পরীক্ষকেরা খুবই কম নম্বর দিতে পারেন।

(ঘ) উচ্চতর দক্ষতামূলক: উচ্চতর দক্ষতা স্তরের প্রশ্নটি উদ্দীপক ও বই মিলে লিখতে হবে। এই স্তরের মানবণ্টন ৪ (জ্ঞান স্তর = ১, অনুধাবন স্তর = ১, প্রয়োগ স্তর = ১ ও উচ্চতর দক্ষতা = ১)। উত্তরে জ্ঞান স্তরটি সিদ্ধান্তের ভাব অনুসারে লিখতে হবে, অনুধাবন স্তরটি বইয়ের নির্দিষ্ট অধ্যায়ের আঙ্গিকে, প্রয়োগ স্তরটি উদ্দীপক থেকে ও উচ্চতর দক্ষতার স্তরটি লিখবে বইয়ের সংশ্লিষ্ট অংশ এবং উদ্দীপকের অংশের সাথে মিল রেখে জ্ঞান স্তরে যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

এখানে চারটি প্যারা করে লেখা সবচেয়ে ভালো। তবে কেউ চাইলে এক প্যারায় বা দুই প্যারায় বা তিন প্যারায় চার স্তরের উত্তর ঠিকভাবে লিখতে পারবেন। (ঘ) নম্বর প্রশ্নোত্তরের জ্ঞান স্তরের উত্তরও খুবই সাবধানে দিতে হবে। কারণ সিদ্ধান্ত নিতে ভুল করলে সেই প্রশ্নের অনুধাবন, প্রয়োগ ও উচ্চতার দক্ষতা স্তরের ভুল উত্তরের প্রভাব পড়বে। যার ফলে শূন্য নম্বর দিতে পারেন।

(ঘ) নম্বর প্রশ্নে উচ্চতর দক্ষতা স্তরে যদি উদ্দীপকের কোনো চরিত্রের সাথে সংশ্লিষ্ট অধ্যায়ের কোনো চরিত্রের বিমূর্ত রূপ/ প্রতিবিম্ব রূপ/ প্রতিরূপ/ অনুরূপ/ একই রূপ/ প্রতিচ্ছবি—এ ধরনের কথা থাকে তাহলে উদ্দীপকে বর্ণিত চরিত্রের এবং সংশ্লিষ্ট অধ্যায়ের ওই চরিত্রের সব কয়টি বৈশিষ্ট্য/ গুণ এক হলে যথার্থ আর এক না হলে যথার্থ নয় লিখতে হবে।

প্রশ্নে ‘প্রতিনিধিত্ব করে’ এ ধরনের কথা থাকলে চরিত্রের সবকিছু বৈশিষ্ট্য/ গুণ না থাকলেও চলবে। প্রায় ৫০% বৈশিষ্ট্য/ গুণ মিলে গেলে যথার্থ লিখতে হবে। মাত্র দু-একটি বৈশিষ্ট্য মিলে গেলে ‘যথার্থ নয়’ লিখতে হবে। আবার উদ্দীপকের মূলভাব এবং অধ্যায়ের মূলভাব/ মূলকথা/ সারকথা/ মূল উপজীব্য একই ধারায় উৎসারিত এ ধরনের কথা থাকলে মূলকথা থাকলেই চলবে। এ ক্ষেত্রে যথার্থ লিখতে হবে। তবে প্রশ্নে যদি সামগ্রিক ভাব/ দিক প্রকাশ পায় এ ধরনের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট অধ্যায়ের এবং উদ্দীপকের সব দিক/ ভাব মেলাতে হবে।

মন্তব্য না দিয়ে যদি মূলভাব কিংবা সমগ্র ভাব ফুটে উঠেছে কি? কিংবা কোনো চরিত্রের প্রতিবিম্ব/ প্রতিচ্ছবি বলা যায় কি না, এ ধরনের কথা থাকলে বলা হয়। যথার্থ/ কিংবা যথার্থ নয় লেখা যাবে না। তাই পরীক্ষার্থীরা মন্তব্যটি যথার্থ নাকি উক্তিটি যথার্থ প্রশ্ন দেখে লিখবে। এছাড়া শেষ প্যারায় সেই বিষয়ে নৈতিকতার কোনো কথা এক বাক্যে লিখলে সবচেয়ে আরও ভালো হবে।

“ভয়েস অফ হ্যালো”র ফেসবুক ক্লিক করুন

“ভয়েস অফ হ্যালো”র ইউটিউব ক্লিক করুন

[শিশুরাই তুলে ধরবে শিশুদের অধিকারের কথা, আপনিও লিখুন আপনার কথা। লেখা পাঠানোর ঠিকানা [email protected]]

Comments are closed.