একজন মানুষকে বিভিন্নভাবে চেনা যায়। সেই চেনা-জানার মাঝেও লুকিয়ে থাকে অজানা অনেক কথা। সবার পরিচিত মুখ কবি কাজী নজরুল ইসলাম। যার নাম শিক্ষাজীবনের শুরু থেকেই পাঠ্যবইয়ে দেখেছি।
কাজী নজরুল ইসলামের বাবা কাজী ফকির আহমেদ ছিলেন মসজিদের ইমাম। কাজী ফকির আহমেদের দ্বিতীয় স্ত্রী জাহেদা খাতুনের ষষ্ঠ সন্তান এই কবি।
তার ডাক নাম ছিল ‘দুখু মিয়া’। চার পুত্রের অকাল মৃত্যুর পরে নজরুল জন্ম নেয় বলে শিশুকালে তার নাম রাখা হয় দুখু মিয়া। এছাড়া ছেলেবেলায় তিনি ক্ষ্যাপা নামেও পরিচিত ছিলেন। পরে নুরু নামও তিনি ব্যবহার করেছেন। আবার অনেকে নজর আলী নামেও ডাকতেন। কবির স্কুল জীবনে পড়াশোনায় ভালো হওয়ায় সেকালে মাসিক ৫ টাকা বৃত্তি পান।
সিয়ারসোল রাজ স্কুলের প্রধান শিক্ষকের বিদায়-কাব্যবাণী রচনা করেন (১১ এপ্রিল ১৯১৬) তিনি। করুণ গাথা নামে বিদায়-কাব্যবাণী রচনা করেন (১৩ জুলাই ১৯১৬) প্রবীণ শিক্ষক ভোলানাথ কর্মকারের বিদায় উপলক্ষে। এছাড়া নবম শ্রেণিতে পড়ার সময় স্থানীয়ভাবে সত্য ঘটনা অবলম্বনে ক্ষমা নামে দীর্ঘ কবিতা লেখেন। পরে মুজফ্ফর আহমদ ‘মুক্তি’ নামে সেটি প্রকাশ করেন ত্রৈমাসিক বঙ্গীয়-মুসলমান-সাহিত্য-পত্রিকায় ১৯২১ সালে। এটিই জাতীয় কবির প্রথম প্রকাশিত কবিতা।
ওই স্কুলে থাকতেই ‘চড়ুই পাখির ছানা’ কবিতাটিও রচনা করেন তিনি। এভাবেই কবির লেখালেখি শুরু। আকবার নামে এক লোকের সঙ্গে কবি কুমিল্লায় বেড়াতে যান। সেখানে নার্গিস নামের এক নারীর সঙ্গে নজরুলের বাঁশি বাজানো নিয়ে আলোচনা হয়। এক রাতে নজরুল সেই গ্রামে খাঁ বাড়ির দীঘির ঘাটে বসে বাঁশি বাজাচ্ছিলেন। সেই বাঁশির সুরে মুগ্ধ নার্গিস।
পরিচয়ের পরই নজরুল নার্গিসের প্রতি আকৃষ্ট হতে থাকেন। আর সেই নারী আকবারের ভাগ্নী। একপর্যায়ে বিয়ের প্রস্তাব দেন কবি। ২২ বছর বয়সে বাংলা ১৩২৮ সালে ৩ আষাঢ়ে নার্গিস-নজরুলের বিয়ের দিন ধার্য হয়। নার্গিসের মামা আকবার বিয়েতে শর্ত হিসেবে ঘরজামাই থাকা ও টাকার লোভ দেখান। এতে নজরুল রেগে যান। প্রেম-ভালোবাসাকে ছিন্ন করে ফুলশয্যা না করেই সেই বাড়ি থেকে বেরিয়ে যান।
পরে কবি আকবারের কাছে একটি চিঠি লেখেন। ১৬ বছর পর ১৯৩৭ সালে নজরুলকে নার্গিস একটা চিঠি লেখেন। নজরুল সেই চিঠির উত্তর দেন কবিতার মাধ্যমে। এর প্রায় বছর খানেক আগেই শিয়ালদহতে নার্গিস ও নজরুলের উপস্থিতিতে বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটে। পরে আবার কুমিল্লাতেই ১৯২৪ সালের ২৫ এপ্রিল নজরুল প্রমীলা নামে হিন্দু মেয়ের সঙ্গে বিয়ের দিন ধার্য করেন। ভিন্ন ধর্মের হওয়ায় অনেকটা গোপনেই ইসলাম ধর্ম মতে ১ হাজার টাকা দেনমোহরে নজরুল-প্রমীলার বিয়ে সম্পন্ন হয়।
কবি চার সন্তানের নাম মুসলিম-হিন্দু উভয়ের মিলনেই নামকরণ করেন। কৃষ্ণ মুহাম্মদ, অরিন্দম খালেদ, কাজী সব্যসাচী এবং কাজী অনিরুদ্ধ। রসিকতা আনন্দ উল্লাসেও কমতি ছিল না কবির। কবি পত্রিকা সম্পাদনা করতেন যে অফিসে সেখানে সবসময় চলতো হাসি-আনন্দের বন্যা।
কবি একবার নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছিলেন। ১৯২৬ সালের কথা। স্বরাজ দলের হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন ঢাকা বিভাগের মুসলমানদের জন্য কেন্দ্রীয় ব্যবস্থাপক পরিষদের সদস্য পদে। প্রচারণা কাজে দল থেকে যে অর্থ দেওয়া হয়, তা প্রয়োজনের তুলনায় অতি নগন্য। নিজের পকেট থেকেই টাকা খরচ করেছেন তিনি। সবার কাছে যাওয়ার পরেও পাশে পাননি অনেক নেতাকে।
পল্লীকবি জসীমউদ্দীনকে তিনি চিঠিতে বলেছিলেন, ঢাকায় আমি শতকরা নিরানব্বই ভোট পাবো। তোমাদের ফরিদপুরের কিছু পেলেই কেল্লাফতে! ভোট শেষে কবির গালভরা হাসি। কিন্তু ভোটের ফলে ভিন্নচিত্র। অল্প সংখ্যক ভোট পান কবি। পাঁচজন প্রার্থীর মাঝে ফলাফলের ভিত্তিতে কবি ৪র্থ হন। যা তিনি মোটেও আশা করেননি। সূত্র: রাইজিংবিডি ( মূল প্রকাশিত ফিচার)
লেখক: মো: সোহেল রানা, শিক্ষার্থী, উত্তরা ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ।
“ভয়েস অফ হ্যালো”র ফেসবুক ক্লিক করুন
“ভয়েস অফ হ্যালো”র ইউটিউব ক্লিক করুন
[শিশুরাই তুলে ধরবে শিশুদের অধিকারের কথা, আপনিও লিখুন আপনার কথা। লেখা পাঠানোর ঠিকানা
[email protected]]
Comments are closed.