যে গ্রামে একজন বাস করেন

আমেরিকার নেব্রাস্কা প্রদেশের একটি ছোট গিয়ে গ্রামের নাম মনোয়ি। মাত্র আধা কিলোমিটার আয়তনের এই গ্রাম খুব বড় নয়। নেব্রাস্কা প্রদেশের একেবারে উত্তর দিকে এর অবস্থান, প্রতিবেশী দক্ষিণ ডাকোটা থেকে এই গ্রামের দূরত্ব মাত্র পাঁচ কিলোমিটার।

মিসৌরি ও নায়োব্রারা– দুটি বড় নদী বয়ে চলেছে এই গ্রামের পাশ দিয়ে। খুব বেশি স্থাপনা নেই এই গ্রামে; একটি পরিত্যক্ত চার্চ যার ভেতরে বর্তমানে অনেকগুলো ট্রাক্টরের টায়ার রয়েছে, একটি লাইব্রেরি যেখানে প্রায় পাঁচ হাজার বই রয়েছে, একটি সাদা ঘর যেখানে গ্রামের একমাত্র অধিবাসী চুরাশিবছর বয়সী এলসি এইলার একটি পানশালা প্রতিষ্ঠা করেছেন এবং একটি পরিত্যক্ত গুদামঘর যেখানে একসময় শস্য সংরক্ষণ করা হতো। গ্রাম ছেড়ে চলে যাওয়া অধিবাসীদের স্মৃতিচিহ্ন হিসেবে কিছু পরিত্যক্ত ঘরও রয়েছে, যেগুলোর মেঝে ফেটে বিভিন্ন অজানা গাছের ডাল।

দ্য পাইওনিয়ার টাউনসাইট কোম্পানি এই ফুলের নামেই গ্রামের নামকরণ করে এবং পরবর্তীতে গ্রামটি এ নামেই সবার কাছে পরিচিতি লাভ করে।

গ্রামের সর্বোচ্চ জনসংখ্যা ছিল ১২৩, যেটি ১৯৩০ সালের আদমশুমারিতে নথিবদ্ধ করা হয়। আবহাওয়া ও মাটির অবস্থা ভালো না হওয়ায় তাদেরকে হতাশ হতে হয়। বছরের পর বছর ধরে চেষ্টা করার পরও উপযুক্ত ফলন না পাওয়ায় শেষ পর্যন্ত অনেক অধিবাসী জীবিকার আশায় অন্যান্য অঞ্চলের উদ্দেশ্যে বেড়িয়ে পড়েন।

১৯৭৫ সালে গ্রামে একটি পানশালা স্থাপন করে এলসি এইলার ও রুডি দম্পতি। ২০০৪ সালের এলসির স্বামী রুডি মারা গেলে তিনি এই গ্রামেই থেকে যাবার সিদ্ধান্ত নেন। আমেরিকান সরকারের কাছে দ্বারা স্বীকৃত একমাত্র মিউনিসিপ্যালিটি যেখানে মাত্র একজন মানুষ বসবাস করেন। ১৯৭৫ সালে প্রতিষ্ঠা করা সেই মদের দোকানই এখন পর্যন্ত এলসির জীবিকার্জনের একমাত্র উৎস। তবে পানশালায় পানীয়ের পাশাপাশি বার্গার কিংবা হটডগের মতো হালকা খাবারেরও ব্যবস্থা আছে। রুডির একটি বড় স্বপ্ন ছিল গ্রামে একটি লাইব্রেরি প্রতিষ্ঠা করা। সেজন্য তিনি অনেক বইও সংগ্রহ করেন। কিন্তু প্রতিষ্ঠার আগেই তাকে পরপারে পাড়ি জমাতে হয়। স্বামীর স্বপ্ন বাস্তবায়নে এলসিই লাইব্রেরি স্থাপন করেন। মনোয়ি গ্রামে যারা বেড়াতে যান, তারা চাইলেই সেই লাইব্রেরিতে কোনো ফি ছাড়াই বই পড়তে পারেন কিংবা ধারেও নিয়ে আসতে পারেন। এই লাইব্রেরির সম্পূর্ণ দেখভাল করেন এলসি।

একজন লাইব্রেরিয়ান, একজন মেয়র, একজন খাবারের দোকান ও পানশালার মালিক হিসেবে সাতাশি বছর বয়স্কা এই নারীকে বেশ ব্যস্ত সময় পার করতে হয়। তিনি শত প্রতিকূলতা সত্ত্বেও তার স্মৃতিবিজড়িত স্থান থেকে চলে যেতে চান না। সূত্র: রোরবাংলা মিডিয়া

“ভয়েস অফ হ্যালো”র ফেসবুক ক্লিক করুন
“ভয়েস অফ হ্যালো”র ইউটিউব ক্লিক করুন

[শিশুরাই তুলে ধরবে শিশুদের অধিকারের কথা, আপনিও লিখুন আপনার কথা। লেখা পাঠানোর ঠিকানা [email protected]]

Comments are closed.