মানুষের দৈনন্দিন প্রয়োজনের শীর্ষ উপকরণে এ তালার অবস্থান। কেন তালার প্রচলন জনপ্রিয় ছিল তার সুদীর্ঘ স্বর্ণালী ইতিহাস নিয়েই আজকের আয়োজন।
প্রথম তালা-চাবি ও তার প্রাথমিক ইতিহাস:
প্রায় ছয় হাজার বছর আগে তালা আবিষ্কৃত হয়েছে। প্রাচীনকালে প্রাসাদ ও ব্যক্তিগত সম্পত্তি সুরক্ষিত করতে ব্যবহৃত হতো তালা।প্রাচীন ইরাকের নিনেভে ধ্বংসাবশেষ থেকে প্রথম নকশাকৃত তালা পাওয়া যায়। নিনেভে হলো প্রাচীন আশেরীয় সভ্যতার একটি শহর, যা টাইগ্রিস নদীর পূর্ব তীরে আধুনিক শহর মোসুলের উপকণ্ঠে অবস্থিত। নিনেভে বহু দশক ধরে পৃথিবীর বৃহত্তম শহর হিসেবে পরিচিত ছিল। এখানে প্রাপ্ত তালা ‘মিশরীয় তালা’ হিসেবে পরিচিত।
এটি কাঠের একটি বৃহৎ ব্লক থেকে তৈরি হয়েছিল। অনেকে মনে করেন যে, এ তালা নিনেভের নিকটবর্তী খোরসাবাদ প্রাসাদ রক্ষার জন্য ব্যবহৃত হয়েছিল। কারণ এটি এর ধ্বংসাবশেষে পাওয়া গিয়েছিল। এ মিশরীয় তালাটি পিন-টাম্বলার ধরনের ছিল। তালাটির ফাংশন ছিল অনেকটা সহজ প্রকৃতির। এ তালা খোলাও যেত সহজে। চাবি দেয়ার স্থানটিও ছিল অনেক বড়। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে, চাবি দেয়ার বড় স্থানটি ছোট হতে থাকে। এটি ধাতু দিয়ে তৈরির প্রচলন হতে থাকে।
পরে মিশরীয়রা তালায় কাঠের গোঁজ যুক্ত করে আরো উন্নত করেছিল। মিশরীয় তালাগুলো ২ ফুট (৬১ সেমি) দীর্ঘ ছিল। আর চাবিগুলো ছিল একটি টুথ-পিকের আকারের।
প্রাচীন রোমের তালা-চাবি: প্রাচীন রোমানরা প্রথম কাঠের তালার পরিবর্তে ধাতব তালা তৈরি করে। খ্রিষ্টপূর্ব ৮৭০ থেকে খ্রিষ্টপূর্ব ৯০০ অব্দের মধ্যে তারা প্রথম ধাতব তালা তৈরিতে সফলতা পেয়েছিল। ধাতব কিংবা ব্রোঞ্জের তালা আজও আমাদের কাছে পরিচিত। প্রাচীন রোমানরা মিশরীয় মডেল অনুসরণ করলেও নতুন কিছু উপকরণ ব্যবহার নিরাপত্তা ব্যবস্থা উন্নত করেছিল। তারা প্রথম বহনযোগ্য তালাও আবিষ্কার করেছিল। যেগুলোতে ইউ-আকৃতির অর্গল ছিল। তবে ঐতিহাসিক রেকর্ড অনুযায়ী, চীনারা এ প্রকৃতির তালার পূর্ণতা দিয়েছিল। রোমানদের হাতেই তালার আকৃতি ছোট হয়। আর চাবিও অনেক ছোট হয়ে যায়।
ছোট আকৃতির তালা ধনী রোমানদের কাছে আকর্ষণীয় ছিল। তারা নিজেদের মূল্যবান জিনিসপত্র বাড়ির মধ্যে তালাবদ্ধ বাক্সে রাখতো। মূলত এ ধরনের বাক্সগুলোর জন্যই তালার আকৃতি ছোট করা হয়েছিল। এর চাবিগুলো আংটির মতো পরা যেত। এতে বহনকারীর আভিজাত্য ও সম্পদের নিরাপত্তার প্রকাশ পেত।
মধ্যযুগের তালা-চাবি: মধ্যযুগে তালা ও চাবি আরো উন্নত হয়েছিল। এ সময়ের মধ্যে তালা-চাবি তৈরি বাণিজ্য প্রতিষ্ঠানে রূপ নিয়েছিল। তালার গুণগত মানও বেশ উন্নত হয়। সে সময়ের তালা-চাবি দেখতেও চিত্তাকর্ষক ছিল।
আধুনিক যুগের তালা-চাবি: আধুনিক যুগে নিখুঁত তালার দর্শন পায় বিশ্ববাসী। তালার গুণগত মানের সঙ্গে দেখতেও বেশ চিত্তাকর্ষক হয়ে ওঠে নিরাপত্তায় গুরুত্বপূর্ণ ধাতুর বস্তুটি। অষ্টাদশ শতাব্দীতে শিল্প বিপ্লবের সূত্রপাতের সঙ্গে সঙ্গে যান্ত্রিক প্রকৌশলও যথেষ্ট উন্নত হয়। সেই সঙ্গে উন্নত হয় তালা শিল্পও। এর যান্ত্রিক প্রকৌশল বেশ জটিল হয়ে ওঠে।
১৭৭৮ সালে ইংল্যান্ডে তালা শিল্পের আধুনিকতার সূত্রপাত হয়েছিল। রবার্ট ব্যারন নামের এক ব্যক্তি প্রথম ডাবল-অ্যাকশন ব্যবস্থার সাহায্যে একটি তালার পেটেন্ট তৈরি করেছিলেন। ব্যারনের আবিষ্কৃত তালাকে ‘মাল্টিপল টাম্বলার’ লকও বলা হতো। এর মাধ্যমে সুরক্ষা ব্যবস্থাও উন্নত হয়। ১৮১৮ সালে জেরেমিয়া চাব নামের এক ব্যক্তি ব্যারনের তালার ডিজাইনের সঙ্গে নতুন প্রযুক্তি ব্যবহার করে তালার ব্যবস্থা অনেকটা স্বয়ংক্রিয় করেন, যা তালা শিল্পে একটি বৈপ্লবিক উদ্ভাবন।
১৮৬১ সালে আমেরিকান উদ্ভাবক লিনাস ইয়েল জুনিয়র ‘ইয়েল সিলিন্ডার লক’ তৈরি করেছিলেন। এটি আধুনিক তালার ব্যবহারের উল্লেখযোগ্য নাম। ‘ইয়েল সিলিন্ডার লক’ বাড়ির মূল প্রবেশদ্বারে কিংবা গাড়ির দরজায় ব্যবহার শুরু হয়।
প্রযুক্তির কল্যাণে এখন হাতের ছাপ কিংবা নম্বর স্পর্শের মাধ্যমে তালা খোলা যায়। সূত্র: ডেইলি বাংলাদেশ
“ভয়েস অফ হ্যালো”র ফেসবুক ক্লিক করুন
“ভয়েস অফ হ্যালো”র ইউটিউব ক্লিক করুন
[শিশুরাই তুলে ধরবে শিশুদের অধিকারের কথা, আপনিও লিখুন আপনার কথা। লেখা পাঠানোর ঠিকানা
[email protected]]
Comments are closed.