ব্রেইল মেশিন দিয়ে অন্ধদের জন্য পবিত্র কোরআন ও হাদিসের বই লিখে সংসার চলত অন্ধ হাফেজ মতিউর রহমানের (৫১)। দীর্ঘ ছয় মাস হলো তার সেই মেশিন বিকল হয়ে পড়ে রয়েছে। যার ফলে অর্থের অভাবে নতুন মেশিন কিনতে পারছেন তিনি।
মতিউর রহমানের বাড়ি জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার হাতিভাঙ্গা ইউনিয়নের পূর্ব আমখাওয়া গ্রামে।
মাত্র চার বছর বয়সে গুটি বসন্ত রোগে আক্রান্ত হয়েছিলেন মতিউর রহমান। সঠিক চিকিৎসা না পাওয়ায় ফলে চোখ দুটো অন্ধ হয়ে তার। এছাড়া ছোট কালেই মা–বাবাকেও হারিয়েছেন। মতিউর রহমানের সংসারে এখন স্ত্রী ও এক ছেলে। ছেলেটি এবার এসএসসি পাস করেছে। এখন কলেজে ভর্তির চেষ্টা করেছে।
মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান সেনাবাহিনী মতিউর রহমানের বাবা মনছুর আলীকে ধরে নিয়ে যায়। এরপর হত্যা করে লাশ ভাসিয়ে দেয় নদীতে। ১৯৭৪ সালে দুর্ভিক্ষের সময় মাকে হারান তিনি। ওই সময় এক ইংরেজ নারীর সহযোগিতায় ঢাকায় অন্ধদের একটি বিদ্যালয়ে ভর্তি হন। সেখানে তিনি দশম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করেন এবং কোরআনে হাফেজ হন। এর মধ্যে ওই ইংরেজ নারী নিজ দেশে ফিরে গেলে পুরো অভিভাবক ছাড়া হয়ে পড়েন।
একটি এতিমখানা থেকে ব্রেইল পদ্ধতিতে মেশিনে তাফসিরুল কোরআনে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত হন ও লেখার প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। সেই থেকে ব্রেইল মেশিন পদ্ধতিতে পবিত্র কোরআন, হাদিসসহ অন্যান্য পাঠ্যবই লিখে জীবিকা নির্বাহ করে আসছিলেন তিনি। তবে ব্রেইল মেশিনটি দীর্ঘদিন ব্যবহারের কারণে এখন অকেজো হয়ে পড়ছে।
মতিউর বলেন, গত বছর করোনা বিধিনিষেধের সময় বাড়িতে বসে থাকায় সামান্য অর্থ যা ছিল, তাও শেষ হয়ে যায়। এর মধ্যে ব্রেইল মেশিনটি নষ্ট হয়ে যাওয়ায় সংসারের আয়রোজগার বন্ধ হয়ে যায় তাঁর। গত ছয় মাস আয়রোজগার না থাকায় পরিবার নিয়ে খেয়ে না খেয়ে দিন পার করছেন তিনি। অনেক আগে কষ্ট করে বসবাসের জন্য তিন শতক জমি কিনেছিলেন। সেটির মালিকানা নিয়েও এক ব্যক্তির সাথে দ্বন্দ্ব চলছে। যেকোনো সময় বসবাসের ঠিকানা হারানোর শঙ্কায় ভুগছেন তিনি।
অন্ধ হয়েও ভিক্ষা করতে যাননি মতিউর রহমান। ব্রেইল মেশিনটি দিয়েই আয়রোজগার করে সংসার চালাতেন তিনি। মেশিনটি বিকল হয়ে যাওয়ার পর বহু জায়গায় ঘুরেছেন, কিন্তু তেমন কারও সহযোগিতা পাননি। দু–একজন সামান্য সহযোগিতা করলেও সেটা দিয়ে তিনি এখনো তার মেশিনটি সচল করতে পারেননি। ব্রেইল মেশিন কিনতে ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকা লাগতে পারে।
মতিউর রহমান বলেন, তিনি সাহায্য নয়, তার মেশিনটি সচল করতে সমাজের বিত্তশালীদের একটু সহযোগিতা চান, যাতে নতুন করে আরেকটি ব্রেইল মেশিন দিয়ে আবার আয় করে সংসার চালাতে পারেন। সূত্র: প্রথম আলো
“ভয়েস অফ হ্যালো”র ফেসবুক ক্লিক করুন
“ভয়েস অফ হ্যালো”র ইউটিউব ক্লিক করুন
[শিশুরাই তুলে ধরবে শিশুদের অধিকারের কথা, আপনিও লিখুন আপনার কথা। লেখা পাঠানোর ঠিকানা [email protected]]
Comments are closed.