নাম রবিউল ইসলাম। তবে নিজেকে বুলেট নামেই পরিচয় দিতে বেশি আগ্রহ তার। বাবা নেই, মা বুদ্ধি প্রতিবন্ধী। প্রতিদিন অন্যের কাছে হাত পেতে, ভিক্ষা করে পেট চলে মা-ছেলের। মাথা গোজার কোনো ঠাঁই নেই। তাই দিন শেষে মাকে নিয়ে হাসপাতালের এক কোণায় রাত কাটে তাদের।
২০২০ সালের প্রথম দিকে বরগুনা সদর হাসপাতাল সড়ক ও সার্কিট হাউজ এলাকায় দেখা যেত রবিউল ইসলামকে। বিকালে সার্কিট হাউজ মাঠে ছন্নছাড়া ঘোরাফেরা করতো তিনি। এজন্য সার্কিট হাউজ মাঠে বেড়াতে আসা দর্শনার্থীদের সঙ্গে তার সখ্যতা গড়ে ওঠে। অনেকেই ভালোবেসে খাবার ও জামা কাপড় কিনে দিতো বুলেটকে। এরকম চলতে থাকে বছর দুয়েক। এরপর হঠাৎ করে বুলেট ও তার মাকে আর কোথাও দেখতে পাওয়া যায় না।
এরপর চলতি বছরের এপ্রিল মাসে আবারও মাকে নিয়ে ফিরে বুলেট। তবে সম্প্রতি একটি বিষয় নজরে আসে সবার। তা হচ্ছে বুলেটের সিগারেট বিক্রি করা। হাতে সিগারেটের প্যাকেট ও লাইটার নিয়ে ফেরি করে বিক্রি করছিল সে। এ ব্যবসা না করার জন্য অনেকে তাকে বোঝাতে থাকে। তবে আট বছর বয়সী বুলেট কারও কথাই শোনেনি।
এরপর বিষয়টি নজরে আসে পুলিশে প্রসাশনের। জেলা পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) সদস্যরা তাকে সিগারেটের বদলে বিকল্প আয়ের মাধ্যম তৈরি করে দেয়। বুলেটকে বাদাম ও বাদাম বিক্রির সরঞ্জাম কিনে দেন তারা। এরপর থেকে প্রতিদিন বিকালে বাদাম বিক্রি করে।
এ বিষয়ে রবিউল ইসলাম বুলেট জানায়, আমার বাবা নেই। মা মানসিক ভারসাম্যহীন। আগে এর-ওর কাছে ভিক্ষা করে পেট চলত আমাদের। এখন বাদাম বিক্রি করে মাকে নিয়ে খাই। থাকার কোনো জায়গা নেই। রাতে হাসপাতালের মেঝেতে থাকি। থাকার মতো একটা আশ্রয় চাই। যাতে মাকে নিয়ে থাকতে পারি।
সে বলে, সবাই স্কুলে যায়। আমি কখনও স্কুলে যাইতে পারি নাই। আমি স্কুলে যেতে চাই, পড়তে চাই। স্কুলে যাইতে পারলে বড় হইয়া পুলিশ হবো।
সাংস্কৃতিক, সামাজিক ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন দুর্বারের সহ-সভাপতি আরিফ হোসেন ফসল বলেন, শিশুটিকে সিগারেট বিক্রি করতে দেখেছিলাম, এখন বাদাম বিক্রি করে। সরকারের পক্ষ থেকে এই ছোট্ট শিশুটির সকল ধরনের ব্যবস্থা করা উচিত।
বরগুনা জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মো. সহিদুুল ইসলাম বলেন, ওই শিশু ও তার মায়ের ব্যাপারে আমরা খোঁজ খবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব। শিশুটি চাইলে সরকারি শিশু পরিবারে থেকে পড়াশোনার ব্যবস্থা করব। তার মাকেও যেন পুনর্বাসন করা যায় সেই ব্যাপারেও খোঁজ নেব।
বরগুনা সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা কাওছার হোসেন বলেন, আমরা ওই শিশুটি এবং তার মায়ের ব্যাপারে খোঁজ নিয়ে দেখব। জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের মাধ্যমে তাদেরকে পুনর্বাসন করা হবে। সূত্র: ঢাকা পোস্ট
“ভয়েস অফ হ্যালো”র ফেসবুক ক্লিক করুন
“ভয়েস অফ হ্যালো”র ইউটিউব ক্লিক করুন
[শিশুরাই তুলে ধরবে শিশুদের অধিকারের কথা, আপনিও লিখুন আপনার কথা। লেখা পাঠানোর ঠিকানা [email protected]]
Comments are closed.