বিভিন্ন জাতের হাইব্রিড ধান চাষ করে সাফল্য অর্জন কলেজ শিক্ষার্থীর

কুমিল্লার নাঙ্গলকোটে ব্ল্যাক রাইসসহ আরও বিভিন্ন জাতের হাইব্রিড ধান চাষ করে সাফল্য অর্জন করছেন কলেজ শিক্ষার্থী আরিফ হোসাইন। কুমিল্লা অজিতগুহ কলেজের অনার্স (বাংলা) শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী তিনি। আরিফের বাবা নাঙ্গলকোট উপজেলার জোড্ডা ইউনিয়নের করপাতি গ্রামের রকিব উদ্দিন একজন কৃষক।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, আরিফ এক একর জমিতে কালো রঙের ধানের (ব্ল্যাক রাইস) আবাদসহ ৩০ শতাংশ জমিতে বেগুনি ও ৩০ শতাংশ জমিতে লাল চালের ধান চাষবাদ করে এলাকায় ব্যাপক সাড়া জাগিয়েছেন। একই সাথে তিন একর জমিতে ইাইব্রিড জাতের ইরি-বোরো ধানের আবাদ করেছেন। ইতোমধ্যে আরিফ ধান কেটে মাড়াই করে ঘরে তুলেছেন।

আরিফ বলেন, করোনাভাইরাসের কারণে পুরো পৃথিবীর মতো আমাদের পরিবারও বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। আমরা যৌথ পরিবার, বাবা-মা বাড়িতে থাকেন। চাচা বিদেশে থাকার সুবাদে তার সহযোগিতায় এবং টিউশনি করে আমি ও আমার বোনসহ কুমিল্লা শহরে থেকে পড়াশোনা করি। করোনায় চাচার চাকরির সমস্যা ও টিউশনি বন্ধ হওয়ায় আমরা গ্রামে চলে আসি।

তিনি বলেন, আমি বাবার সাথে কৃষিকাজে এবং গরুর খামার ব্যবস্থাপনায় মনোযোগ দেই। তবে আমরা লাভের মুখ দেখছিলাম না। এরই মধ্যে আমার এক চাচা আবু মাসুদ লন্ডন থেকে ব্ল্যাক রাইসের একটি ছবি ও ভিডিও পাঠিয়ে বলেন, এই চাল কোথায় পাওয়া যায় একটু খোঁজ নিয়ে দেখো। আমি অনেক খোঁজাখুঁজি করেও পেলাম না।

গত বছরের আগস্টে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের ইংরেজি বিভাগের প্রভাষক কাজী আপন তিবরানী ম্যাডাম ভিক্টোরিয়া ই-কমার্স ফোরাম নামে অনলাইনে ক্ষুদ্র ব্যবসার একটি মাধ্যম চালু করেছেন। আমি সেখানে যুক্ত হয়ে দেখলাম, শিক্ষার্থীরা কিছু-না-কিছু নিয়ে কাজ করছে। আমি তখন ম্যাডামের সাথে যোগাযোগ করে ম্যাডামকে জানাই, আমার বাবা কৃষক, তাই আমি কৃষি উদ্যোক্তা হতে চাই। তিনি আমাকে সাহস দিলেন। আমি তাকে ব্ল্যাক রাইসের বীজ সংগ্রহ করে দেয়ার জন্য বললে তিনি কৃষি বিভাগের লোকজনের সাথে যোগাযোগ করে আমাকে তাদের ঠিকানা দেন। আমি কুমিল্লার বীজ প্রত্যয়ন অফিসার তারিক মাহমুদুল ইসলামের কাছ থেকে বীজ সংগ্রহ করে চাষাবাদে নেমে পড়ি।

আরিফ বলেন, বর্তমানে মোট চার একর কৃষি জমিতে বোরো ধান চাষ করেছি। এক একর পুরো হচ্ছে ব্ল্যাক রাইস। আর ৩০ শতক বেগুনি এবং ৩০ শতক জমিতে লাল চালের ধান চাষ করেছি। বাকিগুলো হীরা-১৯, হীরা-২, ময়না, মিনিকেট, বিন্নি ধান ইত্যাদি। আমাকে এসব কাজে আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব ও ভিক্টোরিয়া ই-কমার্স ফোরামের সদস্যরা অর্থনৈতিকভাবে সহযোগিতা করেছেন। বাবা ও আমি নিজেই ধানের পরিচর্যা করেছি।

ব্যতিক্রমী এসব কালো, লাল ও বেগুনি রঙের চালের ধানে শিক্ষার্থী আরিফের চোখে এখন রঙিন স্বপ্ন। আরিফ স্বপ্ন দেখছেন তার বাবাকে ছাড়িয়ে যাওয়ার। আমার বাবা একজন আদর্শ কৃষক, আর আমি চাচ্ছি কৃষকের পাশাপাশি একজন কৃষি উদ্যোক্তা চাই সে লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছেন  বলে জানিয়েছেন আরিফ।

তিনি জানান, এক একর জমিতে ২০ মণ ব্ল্যাক রাইস উৎপাদন হয়েছে। ৬০ শতাংশ জমিতে ১২ মণ বেগুনি ও লাল চালের ধান উৎপাদিত হয়েছে। এ ছাড়া অন্য আড়াই একর জমিতে বিভিন্ন জাতের হাইব্রিড প্রায় ২০০ মণ ধান উৎপাদিত হয়েছে।

ব্ল্যাক রাইস ধান প্রতি মণ দুই হাজার ৫০০ টাকা থেকে তিন হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি হবে। ধান উৎপাদনে তার প্রায় এক লাখ টাকা খরচ হয়েছে। খরচ বাদ দিয়ে আরও প্রায় এক লাখ টাকার মতো আয় হবে। বিদেশে এক কেজি ব্ল্যাক রাইস ২৮০ টাকা থেকে ৩০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করা যায়। এখনো চার-পাঁচ মণ চালের অর্ডার আছে।

আরিফ আরও জানান, ইতিমধ্যে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ব্ল্যাক ও রেড রাইস সংগ্রহ করে অনলাইনে বিক্রি শুরু করেছেন তিনি। একই সাথে খাঁটি সরিষার তেল, লাল চিনি এবং কিছু নিরাপদ খাদ্য বিক্রি করছেন। এখন অনেকটাই স্বাবলম্বী তিনি। তার থেকে দেখে অনেকে ব্ল্যাক রাইস ধান চাষে আগ্রহী হচ্ছে। চলতি মৌসুমে ব্ল্যাক রাইস আবাদ করা যায় কি না কৃষি অফিসারের সাথে কথা বলে সামনে তিন-চার একর জমিতে ব্ল্যাক রাইস আবাদ করার আশা করছেন।

নাঙ্গলকোট উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো: জাহিদুল ইসলাম বলেন, শিক্ষার্থী আরিফ আমাদেরকে না জানিয়ে এসব ধানের চাষাবাদ শুরু করেন। পরে আমরা খবর পেয়ে নিয়মিত তার সাথে যোগাযোগ রেখেছি। এ উপজেলায় আরিফই প্রথমবারের মতো এ ধরনের ধানের চাষ করেছেন।

“ভয়েস অফ হ্যালো”র ফেসবুক ক্লিক করুন

“ভয়েস অফ হ্যালো”র ইউটিউব ক্লিক করুন

[শিশুরাই তুলে ধরবে শিশুদের অধিকারের কথা, আপনিও লিখুন আপনার কথা। লেখা পাঠানোর ঠিকানা [email protected]]

Comments are closed.