আইনস্টাইনের সুখের চিন্তা-শেষ পর্ব
আমি আজকে ২য় পর্ব (শেষ পর্ব) লিখছি এবং এখানে আলোচনা করব মহাকর্ষ বল যেখানে নেই সেখানে কোন বস্তুকে ত্বরিত করলে সেখানে মহাকর্ষ বল উৎপন্ন করবে। মানে এমন এক জায়গায় যেখানে মহাকর্ষ বল ক্রিয়া করে না সেখানে কোন বলকে মহাকর্ষীয় ত্বরণের সমতুল্য করে ত্বরিত করলে সেখানে মহাকর্ষ বল উৎপন্ন হবে! এটিই ছিল আইনস্টাইনের সুখের চিন্তা যা আমাদের ধারণার ভিতরকে কাঁপিয়ে তুলেছে৷
এর আগের পর্বে আমি লিফটে ওজনহীনতা নিয়ে লিখেছিলাম যেখানে ৩টি মূল বিষয় ছিল।
১) লিফট গতিশীল হয়ে উপরের দিকে উঠতে থাকলে লিফটে থাকা ব্যক্তি বা ব্যক্তিরা ওজন বাড়তি বলে মনে হব।
২) লিফট নিচের দিকে নামতে থাকলে লিফটে থাকা ব্যক্তি বা ব্যক্তিরা কিছুটা ওজনহীন মনে করবে।
৩) লিফটি যদি তার ছিঁড়ে নিচে পড়ে তাহলে লিফটি মাধ্যাকর্ষন বল g এর সমপরিমাণ ত্বরণে নিচে পড়বে এবং লিফটে থাকা ব্যক্তি বা ব্যক্তিরা ওজনহীন অনুভূত করবেন।
এবার আসি আইনস্টাইনের মহাকর্ষ বলের সৃষ্টির কথায়। তার জন্য আমরা একটু চিন্তাধারা দ্বারা পুরো বিষয়টি বুঝতে হবে। প্রথমে আমরা একটি লিফটের মতো একটা বাক্স বা ধরি লিফটিই নেই এবং তারপর এটিকে মহাশূন্যের যেকোন স্থানে যেখানে মহাকর্ষ বল ক্রিয়ারত নেই সেখানে রেখে আসি। বাক্সের ভেতরে দুইটি সমান আকৃতির বল রাখি। একটি লোহার বল এবং অপরটি সাধারণ খেলার জন্য ফুটবল। যেখানে সেই স্থানে মহাকর্ষ বলের প্রভাব নেই তাই বাক্সের ভেতর রাখা বল দুইটি যে স্থানে রাখা হয়েছে সেখানেই থাকবে এবং বাক্সটিও যেখানে রাখা হবে সেটি সেখানেই থাকবে।
পড়ুন: আইনস্টাইনের সুখের চিন্তা- পর্ব ১
এখানে বাক্সের থাকবে না কোন উপর নিচ। বলগুলো উপর নিচ বলে কিছু চিনবে না। এখানে আরেকটা কথা বলে রাখি, আমরা জানি লোহার বল খেলার ফুটবলের তুলনায় অনেক ভারি তবে মহাশূন্যে নিয়ে যাওয়ার পর এটি সম্পূর্ণ ওজনহীন হয়ে পড়বে যেহেতু সেখানে মহাকর্ষের প্রভাব নেই তাই বলটি তার ভর বুঝতে পারবে না। এমনকি খেলার ফুটবলেরও ওজনহীন হয়ে যাবে। বস্তুর ভর বোঝার একমাত্র উপায় হলো মহাকর্ষ বলের প্রভাব।
যেখানে মহাকর্ষ বল নেই সেখানে বস্তু তার ভর অনুভব করবে না বরং নিজেকে হালকা এবং ওজনহীন মনে করবে। এইবার বাক্সের একপাশে কোন যন্ত্রের সাহায্যে টানার জন্য আংটা লাগিয়ে দেই এবং শক্তিশালী কোন ইঞ্জিন দিয়ে বাক্সটিকে ত্বরিত করার চেষ্টা করি। তখন বাক্স কিছুটা ত্বরণ লাভ করবে এবং যে দিক দিয়ে বাক্সটিকে টানা হচ্ছিল সেটি হবে বাক্সের সামনের দিক এবং বিপরীত দিকটা হবে পেছনের দিক। এখন ত্বরিত হওয়ার কারণে বাক্সটি এগিয়ে চলছে কিন্তু বাক্সের ভেতরে থাকা বল দুইটি যে জায়গায় রাখা আছে সেখানেই থাকবে। যতক্ষণ না পর্যন্ত বাক্সটি ত্বরিত হয়ে বল দুইটিকে স্পর্শ না করে ততক্ষণ পর্যন্ত বলগুলো স্থির থাকবে। এখানে একটু পরিষ্কার করে দেই।
ধরি, বলগুলো বাক্সের মাঝখানে আছে এবং সেগুলো স্থির। বাক্সটিকে যখন ইঞ্জিনের সাহায্য ত্বরিত করা হবে তখন বাক্সটি সামনের দিকে এগিয়ে চলবে। যখন বাক্সটি এগিয়ে এগিয়ে বাক্সের মাঝখানে থাকা বলগুলো বাক্সের শেষ অংশটুকু বা পেছনের অংশটুকু পূর্বের অবস্থানে থাকা স্থির বলগুলোকে স্পর্শ করবে তখন বলগুলো কিন্তু স্থির থাকবে না। যেহেতু বাক্সটিকে ত্বরিত করা হয়েছিল এবং বাক্সের পেছনের অংশ যখন বলটিকে স্পর্শ করেছে তখন বাক্সটির পিছনের অংশের ধাক্কায় বলগুলো গতিশীল হয়েছে। তারমানে বাক্সটির ত্বরণের সাথে সমসত্বরণে বলগুলোও ত্বরিত হয়ে গেছে। আগে বলগুলো স্থির ছিল আর স্থির বস্তুকে ত্বরিত করতে হলে বল প্রয়োগ করতে হবে। বাক্সটি বল দুইটির উপর বল প্রয়োগ করবে। তখন কিন্তু বলগুলোও বসে থাকবে না। তারাও বাক্সটির ত্বরণের বিপরীতে সমান বল প্রয়োগ করবে (নিউটনের ৩য় সূত্রমতে)।
ফলে বলগুলো তাদের ভর বা ওজন অনুভূত করবে। তখন কিন্তু সেখানে মহাকর্ষ বল সৃষ্টি হবে! তখন বাক্সটির সামনের অংশ সেখান দিয়ে আংটার লাগিয়ে ইঞ্জিনের সাহায্য টানা হচ্ছিল সেটি হবে বাক্সের ছাদ এবং বিপরীত অংশ বা পিছনের দিক হবে বাক্সের তল। ঠিক যেমন লিফটের মতো। এখানে বাক্সটির ত্বরণের মান যদি পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষজ বলের মানের (g) সমান হয় তাহলে বলগুলো পৃথিবীতে অবস্থানকালীন ভরের সমান ভর বা ওজন অনুভূত করবে। তাহলে আমরা পেলাম, মহাশূন্যে কোন বস্তুকে অন্য কোন বস্তু দ্বারা ত্বরিত করতে পারলে সেখানে মহাকর্ষ বল সৃষ্টি হতে পারে। এটি ছিল লিফটের ওজনহীনতা বিপরীত উপায় যা ছিল আইনস্টাইনের সুখের চিন্তা।
নওশিন জাহান
দশম শ্রেণী, এডভোকেট খলিলুর রহমান উচ্চ বিদ্যালয়, জামালপুর।
“ভয়েস অফ হ্যালো”র ফেসবুক ক্লিক করুন
“ভয়েস অফ হ্যালো”র ইউটিউব ক্লিক করুন
[শিশুরাই তুলে ধরবে শিশুদের অধিকারের কথা, আপনিও লিখুন আপনার কথা। লেখা পাঠানোর ঠিকানা [email protected]]
Comments are closed.