“নিউট্রন স্টার”

আমাদের মহাবিশ্বে অনেক রহস্যময় বস্তু রয়েছে। এদের অদ্ভুত আচরণ, গঠন, আকৃতি সত্যিই অবাক করার বিষয়! পদার্থবিজ্ঞানের দিকে নজর দিলে বোঝা যায় পৃথিবী কতটা রহস্যময়। মহাকাশবিদ্যা বা জ্যোর্তিবিজ্ঞান আরও রহস্যময়। মহাজাগতিক সব বস্তু নিয়ে গঠিত এই রাজ্য। আজকের পর্বে নিউট্রন স্টার নিয়ে আলোচনা হচ্ছে।

মহাবিশ্বে প্রায় নক্ষত্রের ধ্বংস ও সৃষ্টি হয়। নিউট্রন স্টার হচ্ছে সুবিশাল সুপারনোভা বিস্ফোরণের একটি অংশবিশেষ। সহজ করে বলতে গেলে নিউট্রন নিয়ে গঠিত নক্ষত্রকে নিউট্রন স্টার বলে। মহাজাগতিক নক্ষত্রের মধ্যে ব্যতিক্রমী নক্ষত্র হচ্ছে নিউট্রন স্টার। প্রথমেই বলি রাখি, এটি সৌরভরের (সূর্যের ভরের তুলনায়) ১.৩৫ বা ২.১ গুণ ভারি তবে আকারে মাত্র ৮-১০ কিলোমিটা! অদ্ভুত না? চলুন প্রথমে ইতিহাস দিয়ে শুরু করি।

সুব্রহ্মণ্যন চন্দ্রশেখরের ঘটনা মনে আছে? মাত্র ১৯ বছর বয়সে মাদ্রাস থেকে ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালে পড়ার উদ্দেশ্যে জাহাজে করে পাড়ি দিচ্ছিলেন। ঠিক সেই সময় তিনি ভাবতে লাগলেন, নক্ষত্র যখন তার জীবনের শেষ পর্যায়ে চলে যাবে তখন কি হবে? মানে কোন নক্ষত্রের যখন জ্বালানি (হাইড্রোজেন গ্যাস) ফুরিয়ে আসবে তখন আসলে কি ঘটবে?

সাদা বামন দিয়ে বিষয়টা বোঝার চেষ্টা করি। আমরা জানি, প্রতিটা নক্ষত্রের একটা নিদিষ্ট ভর থাকে। সাধারণ কোন নক্ষত্র সৌর ভরের ১.৪ গুণ কম (স্বাভাবিক বলতে গেলে ভর ১.৩৫) হলে তা সাধারণভাবেই নক্ষত্রের জীবন দশা শেষ হবে। আর যদি কোন নক্ষত্রের ভর ১.৪ এর চেয়ে বেশি (প্রায় ২.১) এর সমান হলে, তখন নক্ষত্রের ভেতরের ভরের কারণে যে প্রচন্ড চাপ সৃষ্টি হবে তার জন্য  ইলেকট্রন ও প্রোটন তাদের সত্যা হারিয়ে নিউট্রনের ন্যায় আচরণ করতে থাকবে।

আয়তনের তুলনায় ভর বেশি হওয়ায় সেখানে ইলেক্ট্রন ও প্রোটন (নিউট্রন স্টারের ক্ষেত্রে বলতে হয় নিউট্রন) দুমড়ে মুচড়ে ভেঙ্গে পড়তে শুরু করে। ঠিক তখন সুপারনোভা বিস্ফোরণ ঘটে এবং এক অসীম শক্তি উৎপন্ন হয়। মাত্র কয়েক সেকেন্ডের ব্যবধানে সৃষ্টি হয় নিউট্রন স্টারের। সুপারনোভা বিস্ফোরণ থেকেই নিউট্রন স্টারের সৃষ্টি হয়। সূর্যের সমান ভর নিয়ে আয়তনে সূর্যের তুলনায় বহুগুণ ছোট হওয়ায় এর মাঝে এক অকল্পনীয় মাধ্যাকর্ষণ বল তৈরি হয়, যার শক্তি অসীম! একটি নির্দিষ্ট ভরের তুলনায় ভর বেড়ে গেলে নিউট্রন স্টারের ভেঙ্গে বা বিস্ফোরিত হওয়া আর কেউ থামাতে পারবে না। এটা প্রকৃতির নিয়মেও চলে না। বোঝাই যাচ্ছে নিউট্রন স্টার কতটা অদ্ভুত বস্তু!

আবার কোন নক্ষত্রের জ্বালানি হাইড্রোজেন গ্যাস শেষ হলে এর কেন্দ্রের মাধ্যাকর্ষণ এবং ব্যাসার্ধের তারতম্য ঘটবে। তখন নক্ষত্রের মূলকেন্দ্র আগে ভেঙ্গে পড়া হতে থাকবে। এই ভেঙ্গে পড়া এত দ্রুত হয় যাকে ভয়ঙ্কর বিস্ফোরণ বলা চলে। এই বিস্ফোরণে অসীম শক্তি সৃষ্টি হয় যা থেকে জন্ম হয় নিউট্রন স্টারের। নিউট্রন স্টারের ভর বেশি কিন্তু আয়তন কম হওয়ার কারণ কি?

নিউট্রন স্টারের যে ঘনত্ব তা হচ্ছে এর ছোট আয়তনের মূল কারণ। নিউট্রন স্টারের ১ চামচ নিউট্রন পদার্থের ভর ১ বিলিয়ন টন! বোঝা যাচ্ছে এর ঘনত্ব কেমন? অতি অল্প স্থানে এর কেন্দ্রে এত পদার্থ থাকে যে তাদের মধ্যে আকর্ষণও খুব প্রবল হয়। এত জোরালো আকর্ষণের কারণে পদার্থগুলো একে অপরের থেকে ছিটকে যেতে পারে না। এর ফলে নিউট্রন স্টারের ভেঙ্গে পড়ার কোন সম্ভাবনা নেই।

আইনস্টাইনের আপেক্ষিকতার সূত্রমতে, সেখানে সময় ধীরে চলার কথা। আসলেও তাই হচ্ছে। যদি ২ টা পারমাণবিক ঘড়ির ১ টা পৃথিবীতে এবং অপরটি নিউট্রন নক্ষত্রে রাখা হয় তাহলে পৃথিবীর ১০ বছরের সমান হবে নিউট্রন নক্ষত্রের ৮ বছর। এদের আরেকটি বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এরা প্রচন্ড বেগে ঘুরতে পারে। একটি নিউট্রন স্টার সেকেন্ড প্রায় ৭০০ বার ঘোরে!

নওশিন জাহান
দশম শ্রেণী, এডভোকেট খলিলুর রহমান উচ্চ বিদ্যালয়, জামালপুর।

“ভয়েস অফ হ্যালো”র ফেসবুক ক্লিক করুন
“ভয়েস অফ হ্যালো”র ইউটিউব ক্লিক করুন

[শিশুরাই তুলে ধরবে শিশুদের অধিকারের কথা, আপনিও লিখুন আপনার কথা। লেখা পাঠানোর ঠিকানা [email protected]]

Comments are closed.