কোয়ান্টামের নানা কথা প্রথম পর্বে আলোচনা হয়েছিল সম্ভানার তরঙ্গ। আমরা দেখেছিলাম যে কখনোই কোনো কণার অবস্থান নিশিত ভাবে বলতে পারব না। তবে কণা থাকার সম্ভাবনা বেশি তা বলতে পারব।
কুদ্দুস মিয়া অনেক বড়লোক মানুষ। নানা জিনিস নিয়ে ব্যবসা করেন। মূল ব্যাবসা হলো, মাছের আড়ত, পেয়াজের গুদাম এবং আলুর গুদাম। আড়ৎ ও গুদামগুলো যথাক্রমে কক্সবাজার, যশোর এবং রাজশাহী। মাসের সব দিনই এই ৩ জায়গার যেকোনো একটিতে থাকেন তিনি। তাহলে আজকে কোথায় রয়েছেন তিনি তা আমরা জানি না। তবে এই যেকোন একটিতে আছে তা নিশ্চিত।
কক্সবাজারে থাকার সম্ভাবনা,
p(c)=1/3
যশোর থাকার সম্ভাবনা,
p(z)=1/3
রাজশাহী থাকার সম্ভাবনা,
p(r)=1/3
এখানে p=সম্ভাবনা (probability)।
যেহেতু তিনি তিনটি স্থানের যেকোনো একটিতে থাকবেন তবে কোথায় থাকবেন তা সঠিক জানা নেই। তাই p(c)=p(z)=p(r)=1/3 [“/”হলো ভাগ]।এগুলোর সম্ভাবনা 1/3 কারণ থাকবে ৩টির মধ্যে যেকোনো ১টিতে।
একটু দাড়ান। একটা কল এসেছে….আরে কুদ্দুস ভাই বলল আজকে নাকি অনেক মাছ এসেছে কক্সবাজারে। অনেক মাছ আড়ৎ তুলতে হবে। এখন বলুন তো ভাইয়ের কোথায় থাকার সম্ভাবনা বেশি। হ্যাঁ ঠিক ধরেছেন
তাহলে ধরি, কক্সবাজারে থাকার সম্ভাবনা (1/3) থেকে বেড়ে হয়েছে (2/3)
সুতরাং p(c)=2/3
তাহলে বাকি জায়গাগুলোয় থাকার সম্ভাবনা কমে যাবে। তবে নিশ্চিত ভাবে বলতে যাবে না তিনি কক্সবাজারেই আছেন। শুধু কক্সবাজারে থাকার সম্ভাবনা বেশি রয়েছে।
তবে পাঠকেরা হয়তো মনে বলতেছেন লেখক কোয়ান্টাম ছেড়ে কুদ্দুসের কাছে গেল কেন? তবে এখন আসল কথায় আসি। আমরা একটা কণার অবস্থান নিশ্চিত ভাবে বলতে পারি না। কিন্তু কোথায় আছে তার সম্ভাবনা বলতে পারি।
এই যে একটা কণা বিভিন্ন জায়গায় আছে (আমরা না দেখা পর্যন্ত) একে বলে কোয়ান্টাম সুপার পজিশন। অনেক পরীক্ষা করে দেখা গেছে যে কোয়ান্টাম সুপার পজিশন আসলে সত্যিই হয়।

উপরের ছবি দুটোর কথা মনে আছে কি?
আমরা যদি কোনো ইলেক্ট্রনের উপর নজর না রেখে ডাবল স্লিট পরীক্ষা করি তবে দেখব এটি তরঙ্গের ন্যায় আচরণ করছে। ইলেক্ট্রনগুলো একই সাথে তরঙ্গের মতো করে দুটি ছিদ্র দিয়ে ডুকছে এবং অপর পাশ দিয়ে তরঙ্গ দুটি ইন্টারফেয়ারেন্স করছে। এখানে যে ইলেক্ট্রনের তরঙ্গটি বইছে তার কোথায় ইলেক্ট্রন আছে তা আমরা নিশ্চিত না তবে এখানে আছে জানি অর্থাৎ সুপার পজিশন করে আছে। পর্দার কোথায় ইলেক্ট্রন আঘাত করছে তাও জানি না। কিন্তু জামেলা বাধে পরে। যখন কোনো কণাত্বরক যন্ত্র নিয়ে আমরা দেখার চেষ্টা করি যে ইলেক্ট্রন কোন ছিদ্র দিয়ে ঠুকছে তখন আমরা দেখব ইলেক্ট্রন যেকোনো একটি ছিদ্র দিয়ে ঢুকছে এবং অপর পাশের পর্দায় কোনো ইন্টারফেয়ারেন্স প্যাটার্ন তৈরি না হয়ে কালো বিন্দু দেখা যাচ্ছে যেখানে ইলেক্ট্রন আঘাত করছে।
কী হলো ব্যাপারটা! ইলেক্ট্রন দেখার চেষ্টা না করলে তরঙ্গের মতো যায় কিন্তু দেখতে গেলেই ভদ্র হয়ে এক ছিদ্র দিয়ে ঢুকে কোন যায়গায় আঘাত করছে। এর মাধ্যমেই সুপার পজিশন এর প্রমাণ পাওয়া যায়। কিভাবে তা বুঝিয়ে দিচ্ছি। আমরা যদি ইলেক্ট্রনে দেখার চেষ্টা না করি তবে সে যেকোনো জায়গায় থাকতে পারে। আমরা নিশ্চিত করে বলতে পারব না কোথায় আছে। কিন্তু দেখায় চেষ্টা করলেই ইলেক্ট্রন অন্য জায়গায় চলে আসে। এটাই সুপারপজিশনের বাস্তব প্রমাণ।

একটা গল্প বলি, এক লোকের ছেলে বন্ধু-বান্ধব সহ একসাথে স্কুলে যায়। তাদের স্কুলে যাওয়ার বিভিন্ন রাস্তা আছে। বাবা কোনো দিনও দেখায় চেষ্টা করে না যে তারা কোন রাস্তা দিয়ে যায় কিন্তু প্রতিদিন স্কুলে যায় সেটা জানে। তবে একদিন বাবার দেখায় ইচ্ছে হলো ছেলেগুলো কোন পথ দিয়ে স্কুলে যায়। বাবা একরাস্তায় নজর রাখলে দেখে ছেলে একই রাস্তা দিয়ে যাচ্ছে। অন্য রাস্তায় নজর রাখলে দেখে অন্য রাস্তা দিয়েই যাচ্ছে। মূল কথা যে রাস্তায় নজর রাখে সেই রাস্তা দিয়েই যায়। আরে ব্যাপার কি? ছেলে জানে কী করে আমি কোন রাস্তায় নজর রাখছি?
কণারাও এই একই কাজ করে। কণাকে পর্যবেক্ষণ করার আগে সে সব রাস্তায় থাকে কিন্তু পর্যবেক্ষণ করতে গেলে পর্যবেক্ষক যে রাস্তায় পর্যবেক্ষণ করে কণা সেই রাস্তা দিয়েই যায়। কি করে কণারা খবর পায় কে জানে!
অনেক অনিশ্চয়তা নিয়ে কথা হলো। কিন্তু এই বিংশ শতকের সবচেয়ে মহান বিজ্ঞানীই যে অনিশ্চয়তা মানতে নারাজ। আর কেউ নয় তিনি হচ্ছেন “আলবার্ট আইন্সটাইন” । তিনি যদিও কোয়ান্টাম মেকানিক্স এর একজন জনক তথাপি কোয়ান্টামের এই অনিশ্চয়তার ধর্ম মানতে চান না। তিনি মনে করেন কোয়ান্টাম মেকানিক্স ঠিক তবে এখনো পূর্ণতা না পাওয়া এই অনিশ্চয়তা। তিনি বলেছেন,”আমি মনে করি না চাঁদের দিকে না তাকালে চাঁদ আকাশ থেকে চলে যায়”এর মাধ্যমে তিনি সুপার পজিশন এর ব্যাঙ্গ করেন। এই নিয়ে আইন্সটাইন এবং বোর বাহিনীর মধ্যে অনেক তর্ক-বির্তক হয়।
কোয়ান্টাম মেকানিক্স এর আরেক জনক শ্রোডিঙ্গার নিজের সূত্রকে ভুল প্রমাণ করতে আইন্সটাইনের সাথে যোগ দেয়। একদিকে আইন্সটাইন আর শ্রোডিঙ্গার এবং অন্যদিকে বোর এবং তার ছাত্ররা। এই নিয়ে আগামী পর্বে আলোচনা করা হবে।
জয় সরকার
শ্রেনী: দশম শ্রেণী,সাটিরপাড়া কে.কে. ইনস্টিটিউশন স্কুল এন্ড কলেজ, নরসিংদী।
“ভয়েস অফ হ্যালো”র ফেসবুক ক্লিক করুন
“ভয়েস অফ হ্যালো”র ইউটিউব ক্লিক করুন
[শিশুরাই তুলে ধরবে শিশুদের অধিকারের কথা, আপনিও লিখুন আপনার কথা। লেখা পাঠানোর ঠিকানা [email protected]]
Comments are closed.