কোয়ান্টামের নানা কথা পর্ব – ১
কোয়ান্টাম কণাদের আচরণ খুবই অদ্ভুত। নিউটনের গতি ও বলের সূত্র দিয়ে এদের বেগ ও অবস্থান নির্ণয় করা যায় না। সাধারণত বেশি ভর বিশিষ্ট বস্তুর যদি আদি বেগ, ত্বরণ, অবস্থান ইত্যাদি জানা থাকলে নিউটনের সূত্র দিয়ে নির্দিষ্ট সময় পর এর অবস্থান ও ভরবেগ আমরা নির্ণয় করা যাবে।
তবে কোয়ান্টাম কণাদের ভর প্রচুর কম থাকায় এদের ক্ষেত্রে নিউটনীয়ান পদার্থবিদ্যা খাটে না। তাই এদের জন্য আবিষ্কৃত হয় কোয়ান্টাম বলবিদ্যা, যার অন্যতম তিনজন দ্বারপাল হলেন হাইজেনবার্গ, শ্রোডিঙ্গার এবং লুই ডি ব্রগলি।
বিংশ শতকের প্রথমদিকে আইন্সটাইন প্রমাণ করে দেখান যে, আলো একই সাথে কণা ও তরঙ্গ। ফলে লুই ডি ব্রগলির মনেও প্রশ্ন জাগে ইলেকট্রন আসলে কী? তিনি একটি পরীক্ষা করেন।
এ পরীক্ষায় তিনি ইলেক্ট্রন নিক্ষেপণ যন্ত্রের মাধ্যমে দুটি ছিদ্রযুক্ত কোনো একটি স্লিটের মধ্যে দিয়ে ইলেকট্রন নিক্ষেপ করে এবং সামনে থাকা পর্দায় একটি ইন্টারফেয়ারেন্স প্যাটার্ন তৈরি হয়। যা কেবল তরঙ্গের মাধ্যমেই সম্ভব।
তবে ইলেক্ট্রনকে মনো স্লিটের মধ্যে দিয়ে পাঠালে দেখা যেত যতগুলো ইলেক্ট্রন পাঠানো হয় পর্দায় ততগুলো বিন্দু দেখা যায়।
অর্থাৎ ইলেক্ট্রন একই সাথে কণা ও তরঙ্গ ধর্ম দেখা যাচ্ছে। সুতরাং তার এই পরীক্ষার মাধ্যমে প্রমাণ হয় যে প্রতিটি কণা একই সাথে কণা ও তরঙ্গ ধর্ম দেখায়।
তিনি একটি সূত্র প্রমাণ করেন,
λ=h/mv (“/” দ্বারা ভাগ বোঝানো হচ্ছে)
এর মাধ্যমে তিনি দেখান,
λ∝1/mv
অর্থাৎ ভরবেগ বৃদ্ধি পেলে তরঙ্গদৈর্ঘ্য কমতে থাকে। যেহেতু কোয়ান্টাম কণাদের ভরবেগ কম থাকায় এদের তরঙ্গদৈর্ঘ্য বোঝা যায়। অর্থাৎ যাদের mv কম তাদের তরঙ্গদৈর্ঘ্য বৈশিষ্ট্য জোরালো ভাবেই প্রকাশ পায়। কিন্তু mv বাড়তে থাকলে তরঙ্গদৈর্ঘ্য কমতে থাকে। অর্থাৎ তরঙ্গদৈর্ঘ্য বৈশিষ্ট্য হ্রাস পেতে থাকে। আমরা চারদিকে যা দেখি তাদের mv অনেক বেশি হওয়ায় তাদের তরঙ্গ বৈশিষ্ট্য প্রকাশ পায় না। কিন্তু, সকল কণাই একই সাথে কণা ও তরঙ্গ।
একই সময় হাইজেনবার্গ কোয়ান্টাম নিয়ে কাজ করছেন। অপরদিকে শ্রোডিঙ্গারও ইলেকট্রন নিয়ে কাজ করছেন। কিন্তু হাইজেনবার্গ কাজ করছেন ইলেকট্রনকে কণা ধরে কিন্তু শ্রোডিঙ্গার কাজ করছে ইলেক্ট্রনকে কণা ধরে।
প্রথমে হাইজেনবার্গ কথায় আসা যাক, হাইজেনবার্গ বিজ্ঞানী সূত্রের মাধ্যমে কোয়ান্টাম কণাদের একটি ধর্ম আবিষ্কার করেন। আমি এখন কথা বলব হাইজেনবার্গের বিখ্যাত অনিশ্চয়তার নীতি নিয়ে (গানিতিক সমস্যার যাচ্ছি না) তিনি বলেন যে,”আমরা যদি কোনো কণার ভরবেগ নিশ্চিত ভাবে জানতে পারি তবে এর অবস্থান অসীম হয়ে যাবে, আবার এর অবস্থান নিশ্চিত ভাবে জানতে পারলে এর ভরবেগ অসীম হয়ে যাবে। অর্থাৎ আমরা কোনো কণার ভরবেগ ও অবস্থান একই সাথে নিশ্চিত ভাবে বলতে পারব না।”
আর সেই সূত্রটা হচ্ছে
[এখানে p=ভরবেগ এবং x=অবস্থান]
বিভিন্ন জোড়া জিনিসের ক্ষেত্রে এই অনিশ্চয়তার সূত্র খাটে। যেমন: সময় ও শক্তি যার সূত্র এরকম।
[এখানে E=শক্তি এবং t=সময়] অর্থাৎ মূল কথা আমরা একই সময় কোনো কণার ভরবেগ এবং অবস্থান একই সাথে নিশ্চিত ভাবে মাপতে পারব না।
এবার শ্রোডিঙ্গারের কথায় আসা যাক, তিনি এমন জিনিস আবিষ্কার করলেন যা নিজেও বুজচ্ছে না! তিনি আবিষ্কার করেছে সম্ভাবনার তরঙ্গ। আমরা সবাই জানি কোয়ান্টাম কণারা খুব ক্ষুদ্রতা আর কোনো বস্তুকে দেখতে হলে তার উপর আলো নিক্ষেপ করতে হবে। সেখান থেকে আলো প্রতিফলিত হয়ে আমাদের চোখে আসলেই আমরা তা দেখতে পাই। কিন্তু কোয়ান্টাম কণাদের ভর খুবই কম হওয়ায় আলো যদি এদের ধাক্কাদেয় তবে এদের ভরবেগ ভালো ভাবেই পালটে যায় ফলে অবস্থানেরও পরিবর্তন হয়ে যায়। আমরা যতবার কোনো কণাত্বরক যন্ত্র দিয়ে এদের দেখায় চেষ্টা করব ততবার এদের ভরবেগ ও অবস্থান পরিবর্তন হয়ে যাবে।
আসলে আলো কোনো কণার সাথে ধাক্কা খেলে অই কণা আলোর শক্তি(E=hf)গ্রহণ করে নিজের বেগ বাড়িয়ে ভরবেগও বাড়িয়ে নেয়। ফলে দ্রুত চারদিকে ছুটাছুটি করতে থাকে। ফলে কখনোই আমরা তাদের প্রকৃত অবস্থান বের করতে পারব না। কিন্তু শ্রোডিঙ্গার আমাদের দেখান যে তাদের প্রকৃত অবস্থান বের করতে না পারলেও কোন স্থানে এদের থাকার সম্ভাবনা বেশি তা আমরা নির্ণয় করতে পারি। কোনো তরঙ্গের সবচেয়ে উচু ও নিচু স্থানে (তরঙ্গশীর্ষ ও তরঙ্গপাদ) কণা থাকার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি। একেই বলে সম্ভাবনার তরঙ্গ। কণা আসলে মেঘের মতো করে থাকে। যে স্থানে কণার ঘনত্ব (density) বেশি সেই স্থানে কণা পাওয়ার সম্ভাবনাও বেশি।
এখানে যে জায়গায় ইলেক্ট্রনের ঘনত্ব বেশি সেখানে ইলেক্ট্রনকে পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি তবে নিশ্চিত ভাবে বলা যাবে না। শুধু সম্ভাবনা বেশি।
জয় সরকার
শ্রেনী: দশম শ্রেণী,সাটিরপাড়া কে.কে. ইনস্টিটিউশন স্কুল এন্ড কলেজ, নরসিংদী।
Comments are closed.