বই পড়া উৎসাহ করতে আসাদের পাঠাগার

নিজের বই পড়ার ইচ্ছে ও অন্যকে পড়ার সুযোগ করে দিতে নিজের ঘরের বারান্দায় গড়ে তুলেছেন একটি পাঠাগার। সেই পাঠাগারের নাম দিয়েছেন ‘মিলন স্মৃতি পাঠাগার’। শুধু পাঠাগার প্রতিষ্ঠার মধ্যেই থেমে নেই তাঁর প্রচেষ্টা। এমনকি সাইকেল চালিয়ে পাঠকের বাড়ি গিয়ে বই পৌঁছে দিতেন তিনি। এতে কোন টাকা পয়সা নিতেন না।

এই তরুণের নাম শেখ মুহাম্মদ আতিফ আসাদ। বাড়ি জামালপুর জেলার সরিষাবাড়ী উপজেলার ডোয়াইল ইউনিয়নের হাসড়া মাজালিয়া গ্রামে। আসাদ জামালপুর সরকারি কলেজে উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগে পড়ছেন অনার্স প্রথম বর্ষে।

আর্থিক সক্ষমতা বা পাঠাগার করার পর্যাপ্ত স্থানও ছিল না। শুধু মনের জোরেই আসাদের স্বপ্নের নির্মাণ পাঠাগারটি। মিলন স্মৃতি পাঠাগারের সূচনা হয় ২০১৮ সালের ২৭ জুলাই। নিজ ঘরের বারান্দায় পাটকাঠির বেড়া দিয়ে তৈরি হয়েছে এই পাঠাগার। ছোট্ট এ পাঠাগারটির যাত্রা শুরু হয়েছিল মাত্র ২০টি বই নিয়ে। পরে কিছু ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান এ পাঠাগারে বই-সহায়তা দেয়। বর্তমানে প্রায় দুই হাজার ৫০০ বই রয়েছে এ পাঠাগারে।

পাঠাগার হওয়ার পর থেকে এলাকার সকলে বিনামূল্যে বই পড়তে পারছেন। এতে দিন দিন আসাদের পাঠাগারে পাঠক বেড়েই চলছে। তার পাঠাগারে বই পড়ার জায়গা কম থাকায় গ্রামের মানুষ নিজেদের বাড়িতে বই নিয়ে পড়েন। এতে সপ্তাহ শেষে আবার সেই বই বাড়িতে এসে পাঠাগারে জমা দেয়। আসাদ তার একমাত্র সঙ্গী পুরোনো সাইকেল দিয়ে নিয়ে পার্শ্ববর্তী ১২-১৫ কিলোমিটার দূরে পাঠকের কাছে বই দিয়ে আসছেন। পুরোনো সাইকেলে ঘুরে ঘুরে বই দেওয়া দেখে শেখ সিরাজ নামের একজন প্রবাসী তাঁকে একটা নতুন সাইকেল উপহার দেন।

বাবা আফজাল হোসেন এবং মা জয়নব বিবির ছোট ছেলে আসাদ। আসাদসহ মোট নয় সদস্যের পরিবার। বড় ভাইয়ের মৃত্যুর পর রড-সিমেন্ট-টিনের দোকানে কাজ করে পরিবার চালাচ্ছেন আসাদের মেজ ভাই আল আমিন। পাশাপাশি সুযোগ পেলে যেকোনো কাজ করে কিছু টাকা আয়ের চেষ্টা করেন আসাদ। নিজের লেখাপড়া চালাতে মাঝেমধ্যেই দিনমজুর হিসেবে কাজ করেন আসাদ। ইটভাটায় কাজ, কাঠের কাজ, ধান কাটার কাজ করতে হয়। এত কষ্টের পরেও দমে যাননি এই তরুণ।

প্রথমে পাঠাগার করার ব্যাপারে বন্ধুদের সাথে আলোচনা করেতেই হাসির পাত্রে পরিণত হন আসাদ। আসাদের বড় ভাই রবিউল ইসলাম মিলন। ঘরের বারান্দায় পাঠাগার নির্মাণের ব্যাপারে প্রথম পরামর্শ দিয়েছিলেন তিনিই। এরপর জমি-সংক্রান্ত বিরোধে ২০১৮ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি তার ভাই প্রভাবশালীদের হাতে খুন হন। যেহেতু ভাই অনুপ্রেরণা দিতেন, উৎসাহ যোগাতেন, তাই তাঁর নামেই পাঠাগারের নাম দেওয়া হয় মিলন স্মৃতি পাঠাগার।’

শেখ মুহাম্মদ আতিফ আসাদ বলেন, আমার বই পড়ার ইচ্ছে থাকলেও পড়তে পারি নাই। তাই আমার মতো গ্রামের অন্য তরুণদের কথাও চিন্তা করে জ্ঞান অর্জনের জন্য আমার পাঠাগার করার চিন্তার উদ্ভব।

পাঠাগার নিয়ে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে বলেন, ‘বই পড়া আন্দোলনকে ছড়িয়ে দিতে আমার উপজেলায় বিভিন্ন গ্রামে নতুন নতুন পাঠাগার তৈরি করা। সবাই যেন বই পড়তে পারে।

“ভয়েস অফ হ্যালো”র ফেসবুক ক্লিক করুন
“ভয়েস অফ হ্যালো”র ইউটিউব ক্লিক করুন

[শিশুরাই তুলে ধরবে শিশুদের অধিকারের কথা, আপনিও লিখুন আপনার কথা। লেখা পাঠানোর ঠিকানা [email protected]] 

Comments are closed.