অজানাকে জানা করেছে বিজ্ঞান। আগে যা দূর্বিষহ ছিল এখন তা হয়েছে অতি সহজ। বর্তমান বিশ্বে বিজ্ঞানের অবদান অনেক। এখন বিজ্ঞানের নতুন নতুন আবিষ্কারের ফলে বিজ্ঞানের ডাক আরও বহুদূর পৌঁছে গেছে। বিজ্ঞান এখন মহাবিশ্বের জন্মের সন্ধান পেয়েছে। খুব দ্রুতই মহাবিশ্বের ধ্বংসের সন্ধানও পাবে।
বিজ্ঞানের জয়যাত্রা এখন সর্বস্তরেই রয়েছে। তবে এখন এর পেছনে বাঁধা রয়েছে এবং তা হচ্ছে কুসংস্কার। যা আধুনিক বিশ্বকে আধুনিকতার পৌঁছাতে বিশাল বাঁধা হয়ে দাড়ায়। বিজ্ঞান ও কুসংস্কারের পার্থক্য আকাশ-পাতাল। বিজ্ঞান হচ্ছে যেকোন বিষয়ের যুক্তিযুক্ত, যথার্থ প্রমাণযুক্ত এবং প্রত্যাশিত গ্রহণযোগ্য তথ্য। অন্যদিকে কুসংস্কার হচ্ছে, অযুক্তিকর তথ্য, প্রমাণহীন তথ্য ও অন্ধবিশ্বাস।
প্রাচীনকাল থেকে মানুষ যে সকল অন্ধবিশ্বাস পালন করে আসছে তা বিজ্ঞান সম্মত না। বিজ্ঞান কুসংস্কারের তথ্যকে সমর্থন করে না। কারণ সেগুলো ভিত্তিহীন। বিজ্ঞান যুগের আগে কোন তথ্যকে যে যেভাবে পেরেছে যুক্তি দিয়ে উপস্থাপন করেছে। তখন ছিল না কোন তথ্যের প্রমাণের প্রচলন। সেই থেকেই এখন পর্যন্ত কিছু ভিত্তিহীন অন্ধবিশ্বাস সমাজে রয়েছে। সেই ঠিক-ভুল কেউ প্রমাণ করত না। কিন্তু যখন প্রমাণের যুগ আসল তখন কুসংস্কার সেই প্রমাণ্য তথ্যকে এবং যিনি প্রমাণ করেছে তাকে ভিত্তিহীন এবং ‘নাস্তিক’ বলে দাবি করত। আমরা কিছু বিজ্ঞানের ঘটনা দেখতে পারলেই বুঝতে পারব।
পড়ুন: বড় হয়ে তুমি কি হবে?
পড়ুন: আমরা কেন বিজ্ঞান শিখব?
পড়ুন: মোটিভেশনাল ভিডিও সত্যি কি অনুপ্রেরণা করে?
সূর্যকে কেন্দ্র করে গ্রহ উপগ্রহ ঘুরে: আমরা তো সবাই জানি, পৃথিবী সূর্যকে কেন্দ্র করে ঘুরে, এতে তো কোন সন্দেহ নেই। কিন্তু, খ্রিস্টান জন্মের সাড়ে তিনশো বছর আগে। তখন ছিল অ্যারিস্টটলের যুগ। সে যুগে অ্যারিস্টটল জ্ঞানের সমতুল্য কেউ ছিল না। তাঁকে সবাই অন্ধের মতো বিশ্বাস করত এবং ধর্মের মতো পূজা করত। অ্যারিস্টটল বলেছিলেন, পৃথিবী মহাবিশ্বের কেন্দ্র। পৃথিবীকে ঘিরে সব গ্রহ, নক্ষত্র, উপগ্রহ ঘুরে এবং তার এই ভুল বিজ্ঞানের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় ভুল ছিল।
সেসময়ের আরেক দার্শনিক অ্যারিস্টারকার্স অ্যারিস্টটলের পৃথিবী কেন্দ্রীক সৌরমন্ডলকে ভুল বলে জানান। তিনি হিসাব করে দেখলেন সূর্য পৃথিবীর চেয়ে অনেক বড়। তাহলে পৃথিবী কেন কেন্দ্র হয়ে থাকবে? অবশ্যই সূর্য সৌরমণ্ডলের কেন্দ্রে আছে, সেহেতু সূর্যের ভর পৃথিবীর ভরের চেয়ে বেশি। উনার এই তথ্যে যথার্থ প্রমাণ ও যুক্তি ছিল। কিন্তু সেকালে উনার এই তথ্যের কেউ মূল্য করেনি। কারণ তারা যে অ্যারিস্টটলকে পূজা করত। অ্যারিস্টটলের কথা কি ভুল হতে পারে? অ্যারিস্টকার্সের তথ্যে অন্ধবিশ্বাস ও কুসংস্কারের জন্য ভুল প্রমাণ হলো।
গতিবিদ্যা: স্থির বা গতিশীল বস্তুকে বল প্রয়োগ বা বাঁধা প্রয়োগ না করলে স্থির বস্তু স্থির এবং গতিশীল বস্তু সুষম গতিতে চলতে থাকবে। এটি নিউটনের গতিসূত্রের ১ম সূত্র নামে পরিচিত। অ্যারিস্টটলের ধারণা আর নিউটনের ধারণা এক মনে হলেও বস্তুত এক নয়। অ্যারিস্টটল বলেছেন, বল প্রয়োগ করলে স্থির বস্তুকে গতিশীল করা সম্ভব এবং গতিশীল বস্তুকে স্থির করা সম্ভব। কিন্তু নিউটনের গতিসূত্রের তত্ত্ব আলাদা ছিল। নিউটনের গতিসূত্র গ্যালিলিও এর গতিসূত্রের মতো ছিলেন।
গ্যালিলিও বলেন, কোন স্থির বস্তুকে গতিশীল করতে বল প্রয়োগ করতে হয়। আবার গতিশীল বস্তুকে স্থির করতে সবসময়ই বল প্রয়োগ করতে হবে এটা ঠিক না। তিনি প্রমাণ করেও দেখালেন, একটি স্থির গোল ফুটবলকে বল প্রয়োগ করে গতিশীল করে বালুময় তলে গড়িয়ে যাওয়ার কালে একসময় নিজেই থেমে যাবে, এখানে বল প্রয়োগ করতে হবে না। কারণ, বালুময় স্থানের ঘর্ষণের জন্য ফটবলের গতি ধীর হয়ে যাচ্ছে, এখানে ফুটবলের গতিকে বালু বাঁধা দেবে। গ্যালিলিও এই তত্ত্বটির নাম দিলেন জড়তা। যা নিউটনও সঠিক প্রমাণ করেছেন। কিন্তু গ্যালিলিও যখন অ্যারিস্টটলের গতিতত্ত্বকে বিরোধিতা করলেন তখন তাঁকে চরম মূল্য দিতে হয়েছে। তাঁকে পোপের রোষের মুখে পড়তে হয়েছে। তবুও তিনি থেমে থাকেননি। নিউটনের সময়ে গ্যালিলিও এর তত্ত্ব সঠিক প্রমাণ হয়।
জোড় কলা খেলে যমজ সন্তান হয়: জোড় কলা খেলে যমজ সন্তান হয়। এটি একটি অন্ধবিশ্বাস। আমরা জানি, কলাতে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম থাকে। ১টি কলা খেলে যে পরিমাণ পটাশিয়াম পাওয়া যায় জোড় কলা খেলে দ্বিগুণ পটাশিয়াম পাওয়া যায়। এতে যমজ সন্তান হয় না। এটির বিজ্ঞানভিত্তিক প্রমাণও আছে।
দুধ ও আনারস একসাথে খেলে মানুষ মারা যায়: দুধ ও আনারস খেলে মানুষের পেটে গ্যাস হয় এতে বিষক্রিয়া হওয়ার কোন সম্ভবনা নেই। দুধে ল্যাক্টিক এসিড এবং আনরসে আছে ম্যালিয়েক এসিড। আনারস এবং দুধ একসাথে খেলে পেটে গ্যাসের উপশম হয় এবং পেট খারাপ হয়। এতে মানুষ মারা যায় না।
বড় বড় বিজ্ঞানীদের বিজ্ঞান তত্ত্ব যেমন কুসংস্কারের কারণে ভুল বলে প্রমাণিত হয়েছে ঠিক এখনও কিছু মানুষ বিজ্ঞানকে কুসংস্কারকের কাছে নাকোচ করে দিয়েছে। এখানো মানুষের মাঝে ভুল ধারণা রয়েছে। এগুলো হলো কুসংস্কার যা বিজ্ঞানকে ধ্বংস করে দেয়। আমাদের উচিৎ যেকোন তথ্য হলে যুক্তিযুক্ত ও প্রমাণের ভিত্তিতে সেই তথ্যকে গ্রহণ করা। কুসংস্কার নয় বিজ্ঞান প্রিয় জীবন গড়ে তুলব।
নওশিন জাহান
দশম শ্রেণী, এডভোকেট খলিলুর রহমান উচ্চ বিদ্যালয়, জামালপুর।
“ভয়েস অফ হ্যালো”র ফেসবুক ক্লিক করুন
“ভয়েস অফ হ্যালো”র ইউটিউব ক্লিক করুন
[শিশুরাই তুলে ধরবে শিশুদের অধিকারের কথা, আপনিও লিখুন আপনার কথা। লেখা পাঠানোর ঠিকানা
[email protected]]
Comments are closed.