মিউওন একধরনের মৌলিক কণিকা এবং এটি ইলেকট্রন কণিকার সাথে মিল রয়েছে। এর আধান ঋণাত্মক এবং স্পিন সংখ্যা ½। এটি একটি অস্থিতিশীল উপপারমানবিক কণিকা।
মিউওন কণিকার শক্তিশালী কসমিক রে যখন বায়ুমন্ডলের উপরের স্তরে সংঘর্ষ খায় বা আঘাত করে তখন এই ধরনের কণিকা সৃষ্টি হয়। এই কণাটি অস্থায়ী এবং এর আয়ু ২.২ মাইক্রো সেকেন্ড। মিউওনের আয়ু ১ সেকেন্ড ২ লক্ষ ভাগের এক ভাগ মাত্র। এই মিউওন কণার আবিষ্কারক কার্ল ডি এন্ডারসন।
এটি আলোর ০.৯৯৪c বেগে ভূ-পৃষ্ঠের দিকে ছুঁটে আসতে থাকে। এটি যদি আলোর বেগের সমান বেগে চলতে পারে তাহলে তার জীবনদশায় ৬৬০ মিটারের মতো পথ পারি দিতে পারবেন। মানে মিউওন ২.২ মাইক্রো সেকেন্ডে ৬৬০ মিটার পথ পারি দেয়, আবার সময় শেষে ধ্বংস হয়ে যায়। মিউওন ২.২ মাইক্রো সেকেন্ডেই স্থায়ী থাকে। তারপর নিঃশেষ হয়ে যায়। মিউওন যদি তার আয়ুকালে এই ৬৬০ মিটার কথ পারি দেয় তাহলে পৃথিবীর ভূপৃষ্ঠ পর্যন্ত আসা একেবারেই অসম্ভব। কিন্তু মিউওন ঠিকই পৃথিবীতে আসে এবং এটি বিভিন্ন ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষা করে দেখাও গিয়েছে। তাহলে মিউওন কিভাবে আসে এই পৃথিবীতে?
আজকের আমি মিউওনের পরিচয় নিয়ে আলোচনা করর। কিন্তু মিউওনের আয়ু ও এর আয়ুকালে পারি দেওয়া পথ মিউওন কনার সবচেয়ে বড় রহস্য, তো আজকের আলোচনায় মিউওনের এই রহস্য নিয়ে লেখছি।
এখানে একটি বিষয় উঠে আসবে এবং তা হলো বিশেষ আপেক্ষিক তত্ত্বের কাল দীর্ঘায়ন বা সময় সম্প্রসারণের সূত্র। বিশেষ আপেক্ষিক তত্ত্বের ৩ টি চমকপ্রদ সূত্র আছে, ১) দৈর্ঘ্য সংকোচন, ২) কাল দীর্ঘায়ন, ৩) ভর বৃদ্ধি। তবে বর্তমানে শোনা যাচ্ছে বিশেষ আপেক্ষিক তত্ত্বের ভর বৃদ্ধির সূত্র বলে কোন সূত্রের ব্যাখা নেই।
এই সূত্রটি নাকি সবক্ষেত্রেই চলে না। তবে যাইহোক যেহেতু আগে থেকেই আসছে তো বর্তমানে দেখা যাক কি ফলাফল হবে। বিশেষ আপেক্ষিক তত্ত্ব নিয়ে আমি তেমন কোন কথা বলতে চাই না। আজকের আলোচনায় মিউওন কনা নিয়ে বলব। বিশেষ আপেক্ষিক তত্ত্বের কাল দীর্ঘায়নের সূত্রটা আজকের আলোচনায় লাগবে। তো কাল দীর্ঘায়ের সূত্রটা হচ্ছে এইরকম, স্থির স্থানের তুলনায় গতিশীল স্থানে কাল বা সময় বৃদ্ধি পায়। কাল দীর্ঘায়নের ব্যাখাটা দিতে গিয়ে আইনস্টাইন মজা করে বলেছিলেন, “কোন সুন্দরী মেয়ের সাথে ২ ঘন্টা বসে থাকলে মনে হবে যেন সে ২০ মিনিট ধরে বসে আছে। আবার কোন উত্তপ্ত থাকে ২০ মিনিট বসে থাকলে মনে হবে সে ২ ঘন্টা ধরে বসে আছে” আসলে বিষয়টা হচ্ছে এমন যে, স্থির বস্তু গতিশীল হলে তার সময় স্থির স্থানের তুলনায় ধীরে হয়ে যায় কিন্তু স্থির স্থানে সময় ঠিকই থাকে।
এই যেমন, দুইজন একই বয়সের ব্যক্তি নাসায় কাজ করে এবং তাদের বয়স ৩০ বছর। তাদের একজনকে যদি রকেটে করে আলোর বেগের কাছাকাছি 0.995c বেগে মহাকাশে পাঠানো হল। ৩ বছর পর ফিরে এলো এবং এসে দেখল তার সমবয়সী কর্মীর বয়স ৬০ হয়ে গেছে এবং সেই ব্যক্তির হিসাব হবে ৩ বছর এবং ৩ বছরে সে ৩৩ বছর হয়েছে। এ থেকে বোঝা গেল যে, গতিশীল স্থানে সময় কমে যায়।
একন মিউওনের প্রসঙ্গে আসি। মিউওনের আয়ু তার নিজের (গতিশীল) কাছে ২.২ মাইক্রো সেকেন্ড। এখন যদি আমরা আমাদেরকে স্থির ধরে মিউওনের গতিবেগ পর্যবেক্ষণ করি তাহলে দেখব মিউওন বিশাল গতিতে পৃথিবীর দিকে আসছে। মিউওয়েন এই গতিশীলতার জন্য কাল দীর্ঘায়ন ঘটবে। অর্থাৎ তার অল্প আয়ুতে যে অনেকখানি পথ পারি দিবে। মিউওন গতি আলোর গতির 0.994c ধরলে আমাদের স্থির স্থান থেকে দেখা যাবে মিউওনের আয়ু ৬৩.৫১ মাইক্রো সেকেন্ডে পরিণত হয়েছে।
এখানে ৩০ গুণ পর্যন্ত সময় প্রসারণ ঘটবে এবং মিউওন কনা আগের তুলনায় ৩০ গুণ বেশি পথ পারি দিবে। তাহলে সে ৩০ গুন সময়ে মোট ১৯ কিলোমিটার পথ পারি দিতে পারবে। আমরা জেনে এসেছি, মিউওন কনা বায়ুমন্ডলের উপরের স্তরে তৈরি হয়। এই স্তর থেকে পৃথিবীর ভূপৃষ্ঠের দূরত্ব ১৯ কিলোমিটারের কম। তাই মিউওন সহজেই পৃথিবীর ল্যাবরেটিতে আসতে পারে।
মিউওনের ভর 105.7MeV/C^2। এটি ইলেকট্রনের ভরের ২০০ গুণ। যেহেতু মিউওন ইলেকট্রের সদৃশ্য প্রায় তাই মিউওনকে বেশি ভরের ইলেকট্রন হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
নওশিন জাহান
দশম শ্রেণী, এডভোকেট খলিলুর রহমান উচ্চ বিদ্যালয়, জামালপুর।
“ভয়েস অফ হ্যালো”র ফেসবুক ক্লিক করুন
“ভয়েস অফ হ্যালো”র ইউটিউব ক্লিক করুন
[শিশুরাই তুলে ধরবে শিশুদের অধিকারের কথা, আপনিও লিখুন আপনার কথা। লেখা পাঠানোর ঠিকানা [email protected]]
Comments are closed.