“মিলার ও উরের এক্সপেরিমেন্ট”

আমাদের এই পৃথিবী কতই না রহস্যে ঘেরা! সেই বিশ্বভ্রহ্মাণ্ড সৃষ্টির পর থেকে যখন পৃথিবী নামক গ্রহটির সূচনা হতে থাকে তখন থেকেই দেখা যায়, একের পর এক অদ্ভুদ, অচিন্তনীয়, অবিশ্বাস্য ঘটনা ঘটে চলেছে।

যা মানুষের ভাবনাকে যখন তখন পাল্টে দিচ্ছে। পৃথিবীতে প্রাণের বিকাশ কিংবা প্রাকৃতিক পরিবেশে কিভাবে জৈব উপাদান তৈরি হয়েছিল, তা নিয়ে আজ পর্যন্ত অনেক গবেষণাই হয়েছে এবং এখনও সেই গবেষণা চলছে। বিজ্ঞানীরা নিত্যনতুন সব এক্সপেরিমেন্ট করে চলেছেন। এমনই একটি কালজয়ী এক্সপেরিমেন্ট হচ্ছে,’ মিলার এবং উরের এক্সপেরিমেন্ট ‘। আজকে পর্বে ‘মিলার এবং উরের এক্সপেরিমেন্ট’ এর সর্ম্পকে আলোচনা করা হবে।

এক্সপেরিমেন্টটি, আমেরিকান রসায়নবিদ হ্যারন্ড উরি-এর তত্ত্বাবধানে রসায়নবিদ স্ট্যানলি মিলার কতৃক সম্পাদিত এবং প্রকাশিত হয়। তৎকালীন শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৯৫২ সালে হ্যারন্ড উরি এবং স্ট্যানলি মিলার এক্সপেরিমেন্টটি সম্পন্ন করেন। তবে তারা এক্সপেরিমেন্টটি প্রকাশ করেছিলেন ঠিক তার পরের বছর ১৯৫৩ সালে। তাদের পরিক্ষার মূল বিষয়বস্তু ছিল, কিভাবে প্রাকৃতিক পরিবেশেই জীবন্ত প্রাণী তৈরির জৈব উপাদান তৈরি হতে পারে।

এক্সপেরিমেন্টটি কার্যকর করতে ল্যাবরেটরিতে খুব সহজে কৃত্তিম একটি পৃথিবী তৈরি করছিলেন তারা। ৫ লিটার আয়তনের কাচে আবদ্ধ একটি গোলকে পানি, মিথেন গ্যাস, এমোনিয়া এবং হাইড্রোজেনকে আবদ্ধ করলেন। সেখানে তাপ দিয়ে পানিকে বাষ্পীভূত করে আবার সেটাকে শীতল করে তরল করতে থাকলেন। যা আমাদের পৃথিবীতে ঘটে থাকে। সূর্যের তাপে পৃথিবী পৃষ্ঠের পানি বাষ্পে পরিণত হয় আবার বাষ্প পরবর্তীতে শীতল হয়, বৃষ্টি হিসেবে তরল পানি ভূ-পৃষ্ঠে ফিরে আসে। পৃথিবীতে যেমন বৃষ্টির সময় বজ্রপাত হয়, কাচের গোলকে বৈদ্যুতিক ডিসচার্জের মাধ্যমে বজ্রপাত সৃষ্টির একটা ব্যবস্থা করছিলেন তারা।

এক্সপেরিমেন্টটির প্রথম দিনেই স্ট্যানলি মিলার এবং হ্যারন্ড উরি লক্ষ্য করলেন, কাচের গোলকটিতে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ গোলাপি বর্ণ দেখা যাচ্ছে। প্রথম সপ্তাহ পর আবার লক্ষ্য করলেন যে, কাচের গোলকের ঘন তরল দ্রবণটি গাঢ় লাল ও ঘোলা হয়ে গেছে। এক্সপেরিমেন্ট চলাকালীন সময়ে অণুজীবঘটিত দূষণ দূর করতে মার্কিউরিক ক্লোরাইড ব্যবহার করেছিলেন তারা। এক্সপেরিমেন্টের শেষ পর্যায়ে বেরিয়াম হাইড্রোক্সাইড এবং সালফিউরিক এসিড ব্যবহার করে বিক্রিয়া বন্ধ করা হয়। এছাড়া দূষণ দূর করতে এদের বাষ্পীভূত করা হয়।

স্ট্যানলি মিলার এবং হ্যারন্ড উরি তাদের এক্সপেরিমেন্ট থেকে সহজেই বুঝতে পারলেন যে, কাচের গোলকের ভিতর জীবন সৃষ্টির জন্য প্রয়োজনীয় অ্যামিনো এসিডের বড় একটি অংশই তৈরি হয়ে গিয়েছিল। অর্থাৎ প্রাণের বিকাশের সূচনালগ্নে পৃথিবীতে যে প্রাকৃতিক পরিবেশ এবং অজৈব গ্যাস ছিলো, সেগুলো থেকেই পৃথিবীতে জৈব মৌল তৈরি হতে পারে। এমনকি দীর্ঘ সময়ে সেগুলো ক্রিয়া বিক্রিয়া করে এই পৃথিবীতে প্রাণের সৃষ্টি সম্ভব।

মো: সাওম আল ইরাম
শিক্ষার্থী, এসএসসি পরীক্ষার্থী, শহীদ সমৃতি উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয় মধুপুর, টাংগাইল।

“ভয়েস অফ হ্যালো”র ফেসবুক ক্লিক করুন
“ভয়েস অফ হ্যালো”র ইউটিউব ক্লিক করুন

[শিশুরাই তুলে ধরবে শিশুদের অধিকারের কথা, আপনিও লিখুন আপনার কথা। লেখা পাঠানোর ঠিকানা
[email protected]]
 

Comments are closed.