ধারাবাহিক গল্প “গন্তব্য”-পর্ব ১
আকাশের দিকে অনেক সময় ধরে তাকিয়ে থাকার পর, চুপটি করে চোখ দু খানা নিচের দিকে নামিয়ে নিল। মনে মনে ভাবতে লাগলো হয়তো বৃষ্টি নামবে তবে তা আগের মতো নয়,কারণ টাও তার কাছে বেশ পরিস্কার রয়েছে কেননা বর্তমানে পরিবেশের যে পরিমানে দূষণ হচ্ছে।
সেই দিক থেকে আর পরিবেশের ভারসাম্য আগের মতো নেই ,তাই যত আকাশে মেঘ ভরে যাক না কেন বজ্রপাত হোক না কেন আগের মতো ঝড় দেখা যায় না। এই বিশাল আকৃতির আকাশে মাঝে,পাশ দিয়ে রুদ্র কফি হাউজের ভিতরে যাচ্ছিল কফি খাওয়ার জন্য,আর চোখে রুদ্র কে দেখে মন টা খারাপ হয়ে গেল। কেননা ছেলেটার আজকে দেশের বাড়ি,এ নিয়ে তার সাথে কাল হাসু মামার দোকানে চা খাওয়ার সময় কথা হচ্ছিল। কিন্তু আজকে আকাশের যে অবস্থা তা দেখে মনে হচ্ছে না তার আজ আর বাড়ি ফেরা হবে।
আবার এই দেশের একটা নিয়ম আছে যা প্রতিটা বাস কাউন্টার দৃঢ় প্রত্যয় নিয়ে মেনে চলে তা হচ্ছে,কেউ যদি টাইম মতো নির্দিষ্ট বাসে উঠতে না পারে তাহলে তার টিকিট বাতিল হয়ে যাবে আর আগে যদি কাউন্টারে বলে তাহলে মনে হয় অর্ধেক টাকা ফিরত পেতে পারে তাও সেটা আবার ক্ষেত্র বিশেষ। তাই রুদ্রর জন্য একটু বেশি মায়া লাগছে, এইসব ভাবতে ভাবতে কখন যে পিছন থেকে কাঁধে হাত দিয়ে দাদা বলে ঝাঁকুনি দিচ্ছিল তা খেল করেনি। পিছনে ফিরতে ফিরতে বলতে লাগলাম রুদ্র তুই কি আজ বাড়ি যেতে পারবি কি?
আকাশের যে অবস্থা বাড়ি ফেরা আজ মনে হয় আর হবে না। ছোট একটা নিঃশ্বাস ফেলে বলল চলো দাদা দুই কাপ কফি খাওয়া যাক, পরে দেখি কি করা যায়। কথা না বাড়িয়ে কফি হাউজের ভিতরে যাওয়ার পথ ধরে হাঁটা শুরু করলাম। ভিতরে তেমন মানুষ দেখতে পেলাম না, কয়েকটি টেবিলে কয়েকটি নবযৌবনপ্রাপ্ত ছেলে মেয়েদের রসায়নের আড্ডা দিতে ছিল। সেদিকে তেমন খেল না করে সরাসরি চলে গেলাম দুজনে একটি টেবিলে, রুদ্রের সামনাসামনি বসতে লাগলাম তখন হুট করেই বললো রুদ্র দাদা তুমি এখানে কি করছিলে তাও আবার একা একা? বলার আগেই হুট করে বিশাল একটা ব্রজপাতের শব্দ হলো। দেখলাম ছেলে মেয়েগুলো বেশ ভয় পেয়ে ভীতু হয়ে গেছে।
সে বিষয়ে আর না ভেবে রুদ্রের প্রশ্নের উত্তর দিতে লাগলাম, আসলে টিউশনি করিয়ে এই দিক দিয়ে নীলক্ষেতের দিকে যাচ্ছিলাম। ওখান থেকে কিছু পুরাতন বই কিনতে কিন্তু হঠাৎ করে আকাশ যে ভাবে মেঘে ঢেকে যেতে লাগলো তা দেখে বুঝতে পারলাম যে বেশি দূরে যাওয়া হবে না মনেহয়।
এর আগেই বৃষ্টি পড়া শুরু হবে তারচেয়ে বড় কথা হচ্ছে আকাশের দিকে তাকিয়ে বুঝলাম বৃষ্টির চেয়ে বেশি ঝড় হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে তাই সামনে যাওয়ার সাহস পেলাম না মনে। আনিস আবার একটা ছোট নিঃশ্বাস ফেলে বলল ওহ আচ্ছা, বলতে বলতে আবার প্রশ্ন ছুড়ে দিলো আচ্ছা দাদা হলে যেভাবে নির্বাচন নিয়ে ছাত্রদের মধ্যে মারামারি চলছে তাতে ক্যাম্পাসে থাকা টা এক প্রকার কষ্টদায়ক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। একেক সময় একেক দলের কর্মীরা এসে বলে তাদের দলে যুক্ত হতে, তাদের সাথে মিছিল-সমাবেশ আর মিটিং -ফিটিং করতে। এগুলো করলে নাকি আমাকে তারা বেশ সুবিধা দিবে হলে থাকতে। এইসব নানান ধরনের কথা বলে যায় প্রত্যাহ, একদিন হয় এই পার্টি আগে আসে আরেক দিন না হয় ঐ পার্টি আগে আসে, তবে সব পার্টি আসবে প্রতিদিন এটা তাদের বাধ্যতামূলক। পার্টি থেকে যারা প্রতিদিন বিভিন্ন হলে গিয়ে দাওয়াত দিয়ে আসছে তাদের কি আলাদা কোন চার্জ দেয় কিনা সেটা জানার ইচ্ছা অনেক?
কথা বলার মাঝ পথে দু কাপ কফি অর্ডার করে ফেলেছিল রুদ্র কিন্তু সমস্যা হলো ও কথা বলতে বলতে দুজনে কাপের কফি শেষ হয়ে গিয়েছিল। আকাশ ও কিছু টা পরিস্কার হয়েছে, সেহেতু রুদ্র আমার সরাসরি বসে আছে সে আকাশ পরিষ্কার হওয়ার দৃশ্যটা দেখেনি। রুদ্রর প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার ইচ্ছা টা মন চাচ্ছিল না,আর তারমধ্যে ওর আবার বাস আছে। এখন যদি আমি ওকে বলি আকাশ পরিষ্কার হওয়ার কথা টা তাহলে হয়তো ওর উপকার হবে সাথে আবার আমার ওর প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে না, যা দুই জনের জন্য ভালো হবে। আবার যদি ও ভেবে নেয় আমি ওর প্রশ্নের উত্তর এখন দিতে চাচ্ছি না তাই এই কথা টা বললাম তখন ও আবার কেমন কিছু টা মন থেকে আমার উপর ঘৃনা প্রকাশ করবে।
শেষমেশ কিছু না ভেবেই বলেই ফেললাম রুদ্র দেখ আকাশ কিছু টা পরিস্কার হয়েছে, কথা টা শেষ হওয়ার আগেই রুদ্র পিছনে ফিরে তাকাল এবং হ্যাঁ সূচক ভাবে মাথা দোলাল। আবার আমার দিকে ফিরে বলল দাদা আমি তাহলে এখন যাই আমার তো আবার বাস আছে। এখন যেতে না পারলে আর বাস ধরা হবে না। আমি হ্যা বা না বলার আগেই ব্যাগ টা নিয়ে কফি হাউজ থেকে বের হওয়ার জন্য রওনা দিল বাস কাউন্টারের উদ্দেশে।
সালমান আবদুল্লাহ
এসএসসি পরীক্ষার্থী, তাহফিজুল কুরানিল কারিম ফাযিল মাদ্রাসা, ঢাকা।
“ভয়েস অফ হ্যালো”র ফেসবুক ক্লিক করুন
“ভয়েস অফ হ্যালো”র ইউটিউব ক্লিক করুন
[শিশুরাই তুলে ধরবে শিশুদের অধিকারের কথা, আপনিও লিখুন আপনার কথা। লেখা পাঠানোর ঠিকানা [email protected]]
Comments are closed.