আদম মাতাব্বর কিছু টা ভাবাচেকা খেয়ে উঠল কারণ তেমন কোন কিছু নয় আবার বলতে অনেক গুরুত্বপূর্ণ। সাধারণ সবাই চোর বা ডাকাতের শুনলে লাঠি,দা নিয়ে বের হয় ,বা সাপ বানরের দেখা মিললে গ্ৰামে কৌতুহল নিয়ে তা দেখতে আসে এমন ভাবে যে তা কখনোই দেখেনি এটা সাধারণ একটা রীতি হয়ে দাঁড়িয়েছে।
টান পাড়া গ্ৰামের মানুষের এ রীতির ব্যাতিক্রম নয়, তাদের গ্ৰামে চোর ডাকাত আসলে যেমন লাঠি,দা নিয়ে বের হয় মারতে আবার কখনো সাপ, বানর ভুলে গ্ৰামে ঢুকে গেলে আর তা যদি জানতে পারে মানুষ সবাই তা আগ্রহ নিয়ে দেখতে আসে যেন কখনো তা দেখেনি। কিন্তু এই গ্ৰামে একটা ব্যাতিক্রম রীতি আছে যা হলো শুভ্রা, এই নাম টা শুনলেই মানুষ ঐ জায়গা থেকে যে যেভাবে পারে পালাই। এটা শুধু টান পাড়া গ্ৰামের ক্ষেত্রে নয় আশেপাশের পাঁচ গ্ৰামের মানুষ এই নামটা শুনলে ভয়ে পালাই। যত টা পুলিশকে দেখলে মানুষ পালাই বা ভয় পাই না। ঠিক এই শুভ্রা নাম শুনার কারণে আদম মাতাব্বর গ্ৰামের নেতা হওয়া সত্বেও তিনি ভেবাচেকা খেয়ে বসে থাকেন।
শুভ্রার আসল নাম হলো শুভ্ররা জাহান কিন্তু মানুষ তাকে শুভ্রা বলে থাকে। শুভ্রার কাজ হচ্ছে সময়ে অসময়ে আড্ডার মাঝে পানি ঢেলে দেওয়া। আর পথেঘাটে পান সুপারি বিক্রি করে।
একবার আদম মাতাব্বরের ভাই খলু মাতাব্বর শুভ্রাকে দশ টাকা ধার দিয়েছিল আর সেই ধার দেওয়া টাকা রাতে শুভ্রার বাড়ি থেকে আনতে বলছে। এই কথা খলু মাতাব্বর তার বড় ভাই কে খুশি মনে বলেছে। তা শুনার পর থেকেই ভেবচেকা খেয়ে বসে আছে। কেননা একবার খলিল মিয়ার কাছ থেকে শুভ্রা কিছু টাকা ধার নিয়েছিল, সেই পাওনা টাকা নেওয়ার জন্য প্রায় পাঁচ মাস খানেক খলিল মিয়া শুভ্রার পিছনে পিছনে ঘুরেছে। পরে একদিন শুভ্রা নাকি তাকে বলেছে রাতের বেলায় পাওনা টাকা নিয়ে যেতে, এই কথা শুনে তো খুশি তে আত্মহারা হয়ে পড়েছিল। রাতে ঘুমানোর আগে তাকে যেন ডেকে দেয়। বরের নির্দেশ মতো তাকে ঠিক ছেলেপিলেরা ঘুমালে ডাক দিয়েছে, তিনি মুখে একটা পান দিয়ে শুভ্রার বাড়ির পথে রওনা হয়েছে।
শুভ্রার বাড়ির পথ টা নদীর তীরের ধার দিয়েই চলে গেছে তার সাথে আবার একটা বড় বয়স্ক বট গাছ আছে। বাপ দাদার থেকে শুনেছিল এই বট গাছ নাকি ইংরেজি আমলের আগে এক পাগল বাবা লাগিয়েছিলৈন, এখন পর্যন্ত গাছ টা অক্ষত রয়েছে। গ্ৰামের মাঝে একটা রেওয়াজ আছে যে এই বট গাছে নাকি ভূতেরা থাকে, এই ভূত গুলো নাকি ভালো মানুষের তেমন ক্ষতি করে না। তবে রাতের বেলায় যখন চাঁন আকাশে খাড়া হয়ে দাঁড়ায় তখন নাকি ভূতেরা দল বেঁধে নদীতে স্নান করতে আসে, তখন যদি কেউ এই নদীর তীরের পাশ দিয়ে যায় তখন নাকি ভূতেরা তাদের ঘাড় মটাকিয়ে দেয়। কারণ ভূতরা যখন স্নান করতে নামে তখন তারা উলঙ্গ অবস্থায় যায় তাই তখন কেউ ঐ পথ দিয়ে গেলে তাদের উলঙ্গ শরীর দেখে ফেলে এই কারণেই কেউ চান খাড়া থাকা অবস্থায় আকাশে এই পথ দিয়ে যায় না।
আর ঠিক সেই সময় খলিল মিয়া শুভ্রার বাড়ির পথে রওনা হয়েছে তাই তার ভিতরে সব কিছু মোমের মতো করে গলে যাচ্ছিল। হুট করে বট গাছের দিক তাকিয়ে তার সারা শরীর শিউরে উঠল। ওমা! একি দেখছে। সারা শরীরে এক বিন্দু আঁশ নাই, মাথার চুলগুলো কালো আঁধারের মতো পায়ের গোড়ালির কাছে নেমে এসেছে। হনুমানের মতো মুখটা পোড়া পোড়া। দাঁড়িয়ে আছে সম্পূর্ণ বিবস্ত্র। তিনি নাকি সুরে বলল এই মাড়ানির পুত তোর লগে একটু খেলি তুই আয়।
এই কথা শুনে খলিল মিয়া সেই জায়গায় বেহুঁশ হয়ে পড়ে রইলো। সেই রাস্তা দিয়েই হাট বাজার সেরে দল বেঁধে যাচ্ছিল গ্ৰামের লোক,মাঝ রাস্তায় এভাবে লম্বা ভাবে শুয়ে থাকতে দেখে অবাক হয়ে রইল। তার উপর আবার মুখে সাদা ফ্যানা উঠে পড়ছে। মানুষগুলো যখন ভিড় করে আছে খলিল মিয়া কে তখন আড়াল থেকে শুভ্রার কাপড় চোপড় পড়ে এসে বললো কেমন খ্যাল দেখাইলাম, দেখ বেচারায় হিসু করে মাটি ভাসাই দিছে এই বলে খিলখিল করে হাসতে লাগলো। কুদ্দুস মিয়া শুভ্রার দিকে তাকিয়ে কইলো শুভ্রার তুই এত রাতে এখানে কি করস?
হু! আমি ,হালার পুত আমার কাছে কিছু টাকা পাইতো ঐ টাকার লাইগা অনেক দিন ধরে পিছনে ঘুরতে ছিল আজকে রাতে আইয়া টাকা নিতে কইছিলাম, কিন্তু টাকা নেওয়ার আগেই দেখি বেহুঁশ হইয়া মাটিতে হিসু দিছে। পরের দিন শুভ্রার এই ঘটনা সারা গ্ৰামে ছড়িয়ে গেল আর মানুষ ও ওরে দেখলে পালাইয়া বেড়াই,আর সেই মানুষটার থেকে পাওনা টাকা নেওয়ার কথা শুনে আদম মিয়া ভাইয়ের কি হবে তা চিন্তা করে ভেবাচেকা খেয়ে বসেই রইল।
সালমান আবদুল্লাহ
এসএসসি পরীক্ষার্থী, তাহফিজুল কুরানিল কারিম ফাযিল মাদ্রাসা, ঢাকা।
“ভয়েস অফ হ্যালো”র ফেসবুক ক্লিক করুন
“ভয়েস অফ হ্যালো”র ইউটিউব ক্লিক করুন
[শিশুরাই তুলে ধরবে শিশুদের অধিকারের কথা, আপনিও লিখুন আপনার কথা। লেখা পাঠানোর ঠিকানা [email protected]]
Comments are closed.