ডপলার ইফেক্টে তরঙ্গটাই প্রধান। সেই হিসেবেই প্রথমে তরঙ্গ নিয়ে আলোচনা করলাম। ধরুণ, আপনি রাস্তায় একটা বিন্দু A তে দাঁড়িয়ে রয়েছেন এবং আপনার এক বন্ধু ঔ একই রাস্তার B বিন্দুতে দাঁড়িয়ে আছে।
এরই মাঝে একটা অ্যাম্বুলেন্স বাঁশি বাজাতে বাজাতে A বিন্দু থেকে B বিন্দুর দিকে যাচ্ছে এবং আমরা ধরে নেই অ্যাম্বুলেন্সটি A বিন্দুকে পার হয়ে এখন A ও B এর মাঝখানে আছে এবং এটি B বিন্দুর দিকে মুখ করে আছে। অ্যাম্বলেন্সটি যখন সাইরেন বাজাতে বাজাতে আসছিল তখন বাতাসে কিছু তরঙ্গ সৃষ্টি করেছিল।
আমরা জানি, শব্দেরও তরঙ্গ থাকে। তরঙ্গদৈর্ঘ্যের পরিমাণ কম হলে শব্দের তীব্রতা বেশি হবে। এবং বেশি হলে শব্দের তীব্রতা কম হবে। তবে এটা শব্দ ছাড়াও যেকোন কিছুতেই হয়ে থাকে।
এখন দুই বিন্দুর A ও B জন্য আমরা দুইটি বিষয় পর্যবেক্ষণ করব। প্রথমটি A বিন্দুর ক্ষেত্রে যখন অ্যাম্বুলেন্সটি A বিন্দুর দিকে আসছিল তখন সাইরেনের শব্দ বেশি মনে হবে A বিন্দুর লোকটির ক্ষেত্রে। কারণ তখন তরঙ্গের দৈর্ঘ্য কম ছিল। কিন্তু যখন অ্যাম্বুলেন্সটি পার হয়ে A ও B এর মাঝখানে আসল এবং B বিন্দুর দিকে মুখ করা ছিল তখন A বিন্দুর তুলনায় B বিন্দু শব্দের তীব্রতা বেশি জোরালো হবে তার কাছে। মানে A বিন্দু কিছুটা কম শব্দ শুনবে আর B বিন্দু সাইরেনের শব্দ জোরে শুনতে পারবে। এমনি হয় কারণ, A ও B বিন্দু স্থির ছিল কিন্তু অ্যাম্বুলেন্সটি গতিশীল ছিল।

অ্যাম্বুলেন্সটির যেদিকে সাইরেনের শব্দ যাচ্ছিল যেদিকে শব্দের তীব্রতা বেশি হবে কারণ সেখানে তরঙ্গদৈর্ঘ্যের মান কম ছিল। আর সাইরেনের বিপরিতে শব্দের মান কম থাকায় তরঙ্গদৈর্ঘ্যে বেশি ছিল। তবে গাড়ি স্থির থাকলে তরঙ্গদৈর্ঘ্য উভয় পাশেই সমান থাকত ফলে স্থির A ও B বিন্দু একই শব্দ শুনতে পেত।
যেহেতু গাড়িটি গতিশীল এবং আমরা জানি, যে দিকে বস্তু গতিশীল বস্তুর তরঙ্গ সেদিকে ক্রিয়া করবে। তাই গতিশীল হওয়ার কারণে সেদিকে শব্দ ক্রিয়া করা হয়েছিল সেদিকে তরঙ্গদৈর্ঘ্যে কম থাকবে এবং শব্দের তীব্রতা বেশি হবে। অপরদিকে বিপরীত দিকে তরঙ্গদৈর্ঘ্যে বেশি হবে এবং শব্দের তীব্রতা কম হবে। আর এজন্যই A বিন্দুর তুলনায় B বিন্দু অ্যাম্বুলেন্সের সাইরেনের শব্দ বেশি শুনতে পারবে। এটাই হচ্ছে ডপলার ইফেক্ট। ডপলার ইফেক্টের সূত্রটি হচ্ছে – উৎস এবং পর্যবেক্ষকের মধ্যকার আপেক্ষিক গতির কারণে কোন তরঙ্গের কম্পাঙ্ক পরিবর্তিত হয়ে যাওয়ার ঘটনাকে ডপলার ইফেক্ট বলে।
ডপলার ইফেক্টের সবচেয়ে বেশি ব্যবহার হয়, মহাকাশে কোন বস্তুর গতির সাপেক্ষে অন্য গতির বেগ বা গতি নির্ণয় করা যায়। এক্ষেত্রে আলোর রশ্মির দৃশ্যমান বর্ণের রঙের সাথে মিল রেখে হিসাব করতে হয়। আমি আগেই বলেছি আলো তরঙ্গদৈর্ঘ্যের ধর্মের বিবেচনায় ডপলার ইফেক্ট কার্যকরী হয়।
আমরা জানি, লাল আলোর তরঙ্গ দৈর্ঘ্য বেশি সেক্ষেত্রে লাল আলোর তীব্রতা কম। অন্যদিকে নীল আর বেগুনী আলোর তরঙ্গদৈর্ঘ্য কম তাই এর তীব্রতা বেশি। এভাবে বিভিন্ন আলোর তরঙ্গদৈর্ঘ্যে ও কম্পাংকের পার্থক্য থাকে। কোন উৎসের প্রকৃত তরঙ্গদৈর্ঘ্যে জানা থাকলে ডপলার শিফটের মাধ্যমে যে আলোকরশ্মি পর্যবেক্ষিত হয় তা থেকে ঔ উৎসের বেগ নির্ণয় করা যায়।
ডলার ইফেক্টের কারণে পর্যবেক্ষকের কাছে উৎস থেকে আসা ধ্রুব তরঙ্গ দৈর্ঘ্যের ভিন্নতার ফলে আলেক উৎসের বেগ নির্ণয় করা যায়, একে ডপলার শিফট বলে। এই ডপলার ইফেক্ট জ্যোর্তিবিজ্ঞান বা অ্যাস্ট্রোসায়েন্সে নতুন এক পথ খুলে দিয়েছে। কোন বস্তুর তরঙ্গদৈর্ঘ্যে দিয়ে ঔ বস্তুর আপেক্ষিক গতি ও বেগ মাপা সম্ভব হচ্ছে। মহাজাগতিক বস্তু থেকে আসা আলোর পর্যবেক্ষিত তরঙ্গ দৈর্ঘ্য ও প্রকৃত তরঙ্গ দৈর্ঘ্য জেনে এদের বেগ বের করা সহ আরও জানা যায় যে, এসব বস্তু আমাদের দিকে আসছে নাকি বিপরীত দিকে যাচ্ছে৷ এক্ষেত্রে আলোর রশ্মির দৃশ্যমান বর্ণের ভিত্তিতে তা নির্ণয় করা যায়।
ডপলার ইফেক্টের মাধ্যমে বিগব্যং এর প্রমাণ মিলেছে৷ এছাড়াও অনেক ধেয়ে আসা ক্ষতিকারক নক্ষত্র থেকে বাঁচার জন্য পদক্ষেপ নেওয়া সম্ভব হচ্ছে।
নওশিন জাহান
দশম শ্রেণী, এডভোকেট খলিলুর রহমান উচ্চ বিদ্যালয়, জামালপুর।
“ভয়েস অফ হ্যালো”র ফেসবুক ক্লিক করুন
“ভয়েস অফ হ্যালো”র ইউটিউব ক্লিক করুন
[শিশুরাই তুলে ধরবে শিশুদের অধিকারের কথা, আপনিও লিখুন আপনার কথা। লেখা পাঠানোর ঠিকানা [email protected]]
Comments are closed.