মহাবিশ্ব প্রসারিত হচ্ছে!

মহাবিশ্ব প্রসারণশীল এই কথাটি নতুন নয়। কম বেশি সকলের জানা রয়েছে যে মহাবিশ্ব প্রসারিত হচ্ছে। অর্থাৎ মহাবিশ্ব স্থির না। প্রসারণ হচ্ছে মানে বৃদ্ধি লাভ করছে বা বেড়ে যাচ্ছে। মহাবিশ্ব প্রসারণ বলতে মহাবিশ্বের প্রতিটি বস্তু কণাসহ মহাবিশ্বের সীমানা বৃদ্ধি পাচ্ছে। সহজ কথায় মহাবিশ্ব ছড়িয়ে পড়ছে।

আমাদের সৌরজগতের মতো মহাবিশ্বে এমন আরও অনেক কোটি কোটি গ্রহ উপগ্রহের কেন্দ্র রয়েছে যা নিয়ে গঠিত হয় গ্যালাক্সি। আবার এমন লাখ লাখ গ্যালাক্সি রয়েছে মহাবিশ্বে। এসব গ্রহ, উপগ্রহ, নক্ষত্র, গ্যালাক্সির ইত্যাদি মহাবিশ্বে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে।

তবে এগুলো একত্রে লাগালাগি অবস্থায় থাকে না। এগুলো ফাঁকা ফাঁকা স্থানে ছড়িয়ে থাকে। এর মাঝখানে ফাঁকা স্থান রয়েছে। তবে এই ফাঁকা স্থান বা শূন্যস্থানও মহাবিশ্বের একটি অংশ। এসব কিছুই প্রতিদিন প্রসারিত হচ্ছে।

বিগ ব্যাং এরপর থেকেই মহাবিশ্ব প্রসারিত হওয়া শুরু করেছে। মহাবিশ্বের প্রসারণ বাড়তে থাকার ফলে তাপমাত্রা কমতে থাকা শুরু করেছে এবং এভাবে মহবিশ্ব জীবের বসবাসযোগ্য হয়ে উঠেছে। মহাবিশ্ব যে প্রসারিত হচ্ছে তা প্রথম নির্ণয় করেন এডউইন হাবল। একটি গ্যালাক্সি থেকে আরেকটি গ্যালাক্সি দূরে সরে যাচ্ছে এবং সেটি সমানুপাতিক এমন ঘটনা দেখতে পান তিনি। অর্থাৎ দুই গ্যালাক্সির মধ্যে যে ব্যবধান বা দূরত্ব রয়েছে, ঠিক তত বেগেই একটি গ্যালাক্সি আরেকটি গ্যালাক্সি থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। এটাকেই সমানুপাতিকভাবে বোঝানো হয়েছে।

হাবল দুই গ্যালাক্সির দূরত্ব, বেগ, আলোর উজ্জ্বলতা ইত্যাদি পরিমাপ করে প্রমাণ করেন যে, মহাবিশ্ব স্থির নয়। এটি প্রসারিত হচ্ছে। এই প্রসারণশীল মহাবিশ্বের আবিষ্কারটি ছিল বিংশ শতাব্দীর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কার। মহাবিশ্বের জন্ম থেকে প্রসারণ হওয়া শুরু করেছে এবং এটি ভবিষ্যত পর্যন্ত প্রসারিত হতে থাকবে। তবে সম্প্রতি নাসা জানায়, যে মহাবিশ্ব আগের তুলায় ৯ শতাংশ দ্রুত হারে প্রসারিত হচ্ছে।

এখন প্রশ্ন জাগতে পারে যে, মহাবিশ্ব কেন প্রসারিত হচ্ছে? একটি বাস্তব উদহারণ দিয়ে শুরু করা যাক। একটি বেলুন নেই যার গায়ে গোল গোল বিন্দুর মতো লাল, নীল, সবুজ, হলুদসহ অসংখ্য বিন্দু রয়েছে এবং সেগুলো গোঁজামিলপূর্ণ হয়ে একসাথে রয়েছে। বেলুনটি এইবার ধীরে ধীরে ফুলানোর চেষ্টা করি। দেখা যাবে, বেলুনের গায়ের বিন্দুগুলো পরস্পর থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। বিষয়টি একটু চিন্তা করুন, যখন বেলুনটিকে ফোলানো হচ্ছে তখন বেলুনের বিন্দুগুলো একসাথে না থেকে আস্তে আস্তে একে থেকে অন্যের দূরে সরে যাচ্ছে অর্থাৎ প্রসারিত হচ্ছে। বেলুনকে যদি মহাবিশ্বের সাথে তুলনা করছি তাহলে বলব মহাবিশ্ব খুব দ্রুত গতিতে প্রসারিত হচ্ছে।

কারণ যখন বিগ ব্যাং বিস্ফোরিত হয়েছিল তখন তাপমাত্রা পাঁচ বিলিয়ন ছিল। তখন মহাবিশ্বের সকল বস্তু একটি বিন্দুর মধ্যে সজ্জিত ছিল। এই উত্তপ্ত অবস্থায় অণু পরমাণুগুলো একে অপরের থেকে ছিটকে যেতে শুরু করে আর এটাকেই বলা হয়েছিল প্রসারণ। এমন কশেক’শ বছর পর অণু পরমাণুগুলো ঠান্ডা হতে বা তাপমাত্রা কমতে শুরু করে এবং সেগুলো মিলে মহাবিশ্বে বস্তু বা গ্রহ, নক্ষত্র, গ্যালাক্সি এগুলো তৈরি করে। সেই তখনকার প্রসারণ এখনও রয়েছে। অর্থাৎ মহাবিশ্ব স্থির নয়, প্রতিটি বস্তু প্রসারিত হচ্ছে। তবে এই প্রসারণ কবে শেষ হবে? বা এই প্রসারণ কি বন্ধ হয়ে যেতে পারে? এমন সম্ভাবনাময় প্রশ্ন থাকতেই পারে।

এখন আমরা, মহাবিশ্বকে স্থির মনে করি, অর্থাৎ মহাবিশ্ব প্রসারিত হচ্ছে না। তখন মহাবিশ্ব সংকুচিত হয়ে আগের একটি বিন্দুতে পরিণত হবে। কারণ মহাবিশ্ব স্থির হওয়ায় মহাবিশ্বের বস্তুগুলোর মহাকর্ষের বলের কারণে একে অপরের উপর হুমড়ি খেয়ে পড়তে পড়তে শুরু করবে। যার ফলে মহাবিশ্ব সংকুচিত হতে থাকবে। আর যদি মহাবিশ্ব ধীর গতিতে প্রসারিত হয় তখনও কিন্তু মহাকর্ষ বল সেই প্রসারণ বন্ধ করে দিবে এবং আগের মতোই সংকুচিত অবস্থায় ফিরে আসবে৷

আবার, মহাবিশ্ব যদি দ্রুতগতিতে প্রসারিত হয় তাহলে মহাকর্ষ শক্তি সেই প্রসারণকে থামাতে পারবে না। তখন অবিরাম গতিতে মহাবিশ্ব প্রসারিত হতে থাকবে। বিষয়টি একটু সহজ করেই বলি, আমরা পৃথিবীতে অবস্থানরত একটি রকেটকে এই বিষয়ের সাথে তুলনা করি। রকেটটির মুক্তিবেগ বা পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষজের সীমানা ছাড়ানোর বেগ কম হলে তখন রকেটটি কিছুদূর উপরে উঠার পর তা আবার নিচে নেমে আসবে। আবার রকেটটির মুক্তিবেগ যদি নির্দিষ্ট (সেকেন্ডে ১১.২৬৫৪০৮ কিলোমিটার) হয় তাহলে সেটি মাধ্যাকর্ষজ শক্তিকে ছিটকে যেতে পারবে ফলে সেটি পৃথিবীর বাইরে চলে যাবে।

রকেটটি পৃথিবীতে না ফেরা পর্যন্ত সেটি আর মাধ্যাকর্ষণ শক্তির কাছে আসতে পারে না। তো মহাবিশ্ব সেই বিগ ব্যাং থেকে প্রসারিত হচ্ছে। এখন পর্যন্ত এর প্রসারণ থামেনি। এবং এই প্রসারণ মহাকর্ষ বলকে প্রভাবিত করে না।

আমি আগেই বলেছিলাম, মহাবিশ্ব প্রসারিত হচ্ছে একটি নিয়মে এবং সেটি হচ্ছে দুই গ্যালাক্সির যতটুকু দূরত্ব ঠিক তত বেগেই একটি গ্যালাক্সি থেকে অপর একটি গ্যালাক্সি দূরে সরে যাচ্ছে বা প্রসারিত হচ্ছে। যা থেকে বোঝাচ্ছে যে মহাবিশ্বের চিরকাল প্রসারিত হতে থাকবে।

নওশিন জাহান
দশম শ্রেণী, এডভোকেট খলিলুর রহমান উচ্চ বিদ্যালয়, জামালপুর।

“ভয়েস অফ হ্যালো”র ফেসবুক ক্লিক করুন
“ভয়েস অফ হ্যালো”র ইউটিউব ক্লিক করুন

[শিশুরাই তুলে ধরবে শিশুদের অধিকারের কথা, আপনিও লিখুন আপনার কথা। লেখা পাঠানোর ঠিকানা [email protected]]

Comments are closed.