“এক রোমাঞ্চময় রাত” পর্ব-১

একদিন বিকালে একটা কাজে পাশের এলাকায় আসলাম। কাজ শেষ করতে করতে রাত বারোটা বেজে যায়। তবে গভীর রাত হতে পারে বলে আগে থেকেই একটা সিএনজি ঠিক করে রেখেছিলাম। সেই সিএনজি করে বাসার দিকে রওনা দিলাম। বাসার কাছে আসতে আসতে রাত তখন দেড়টা বাজে।

আমাদের বাড়ির কাছের রাস্তা টার বেহাল অবস্থা। সারারাস্তায় বড় বড় গর্ত রয়েছে। হঠাৎ সেই গর্তে সিএনজির একটা চাকা পড়ে বন্ধ হয়ে যায়। ড্রাইভার অনেকক্ষণ চেষ্টা করে চালু করার জন্য, তবে সে ব্যর্থ হয়। অবশেষে  সে আমাকে বলে- ভাইজান সিএনজি চালু হচ্ছে না। এখান থেকে এই সামান্য পথটুকু আপনাকে হেঁটে যেতে হবে।

আমি আর তেমন কিছু বললাম না। এখান থেকে আমার বাসাও বেশি দূরে না। মাত্র সাত মিনিটের পথ। তাই ওনাকে ভাড়ার টাকা দিয়ে আমি বাসার দিকে হেঁটে রওনা দিতে যাবো, এমন সময় হঠাৎ করে একটা কালো বিড়াল আমার সামনে দিয়ে রাস্তার এপাশ থেকে ওপাশে দৌড়ে চলে যায়। আমি তেমন ভীতু মানুষ না তবে হঠাৎ করে বিড়ালটা সামনে আসার কারণে খুব চমকে যাই। নিজের বুকের উপর শুকনো থুতু দিয়ে হাঁটা শুরু করলাম।

পকেট থেকে মোবাইল বের করে কানে ইয়ারফোন লাগিয়ে হাই সাউন্ড দিয়ে গান শুনতে লাগলাম। তবে কিছুক্ষণ পরে হঠাৎ মোবাইলটা বন্ধ হয়ে যায়। কোনো ভূতরে কাণ্ড নয় মোবাইলে চার্জ শেষ তাই তবে সিএনজিতে উঠার আগেই খেয়াল করেছিলাম কিন্তু এত তাড়াতাড়ি বন্ধ হয়ে যাবে এটা ভাবিনি। কান থেকে ইয়ারফোন খুলে হাতের মধ্যে নিয়েই এগিয়ে যেতে লাগলাম।

হঠাৎ করে মনে পড়লো এই পথে যাওয়ার সময়ই একটা পুরনো জমিদার বাড়ির দেখা মিলে। ওই জমিদার বাড়িটি নিয়ে অনেকের কাছে নানান ধরনের নানান রকমের অলোকিক কথা শোনা যায়। যদিও আমি এসব একদমই বিশ্বাস করি না। এলাকাটা এখনও এক কথায় উনিশ শতকের সময়ের মতো। রাজধানীর বা পাঁচটি মফস্বল শহরের মত উন্নতি এখানে এখনও আসেনি বললেই চলে। অবশেষে হাঁটতে হাঁটতে জমিদার বাড়ির সামনে চলে এসেছি।

বাড়িটি দেখতে অনেক সুন্দর, মোঘল আমলের দালানগুলোর মতো তবে বাড়িটির দেয়ালে শেওলা পড়েছে অযত্নে নানা স্থানের প্লাস্টার ধসে পড়েছে জানালার খুঁটি, কাঠের পাল্লা কিছু ভেঙে পড়েছে নয়তো কেউ খুলে নিয়ে কেটে পড়েছে। আর চারদিকের উচু গাছগুলোর জন্য বাড়িটি একদম ঢাকা পড়ে যায়। যার ফলে দিনেও তেমন আলো বাতাস প্রবেশ করে না। অমাবশ্যার সময়ের জন্য আরো অন্ধকার লাগছিলো। হাতের হাতঘড়িটার দিকে তাকিয়ে দেখলাম এখন তিনটে বেজে দশ মিনিট। কেনো যেনো ভাবলাম জমিদার বাড়ির ভেতরটা একটু ঘুরে দেখা যাক। যেই ভাবা সেই কাজ।

জমিদার বাড়িতে প্রবেশ করার জন্য এগিয়ে গেলাম বাইরের বড় লোহার গেটে ধাক্কা দিতেই সেটা বিকট শব্দের সাথে পিছিয়ে গেলো। আমি বাড়ির সদর দরজায় এসে দাঁড়ালাম। হালকা ধাক্কা দিতেই সেটাও খুলে গেলো। দরজা খোলার সাথে সাথে গোটা দশ এক বাদুড় উড়ে বের হয়ে গেলো আমার মাথার উপর দিয়ে। আমি আর একটু ভেতরে এসে পাশে একটা মশাল দেখলাম। মশালটি জ্বালিয়ে হতে নিয়ে ভেতরে চলতে লাগলাম। বাড়িটি ছিল দুতলা, আমি সাত পাঁচ না ভেবে উপরে উঠলাম। বাসার কামরাগুলো দেখতে লাগলাম, সেকেলে গড়নের নানা আসবাব, ভাঙ্গা ঝাড়বাতি আয়না, করকর্য করা ছোট ছোট মূর্তি এক পাশের দেয়ালে ঝুলছে মর্চে ধরা ঢাল-তলয়ার এগুলো সব দেখতে দেখতে হঠাৎ মনে হলো কে যেনো আমার কাঁধে হাত রেখেছে। সাথে সাথে পেছনে তাকিয়ে দেখি মধ্যবয়সী একজন লোক। হার্ট এ্যাটাক করতাম প্রায় খালি বাসায় কে থাকবে! লোকটি বললো “কি চাই? এখানে এসেছো কেন?”

আমি সব খুলে বললাম। লোকটি হালকা হেসে বললো “অনেক বছর এ বাড়িতে কেউ আসে না ।” আমি বললাম “না বলে চলে এসেছি.. ভেবেছি কেউ নেই হয়তো, সে জন্য আমায় মাফ করবেন। আজ রাতটার মতো কি থেকে যেতে পারি?” লোকটি আবারও হেসে বললো “কোনো সমস্যা নেই, থেকে যাও।” লোকটিকে কেমন যেন মনে হলো আমার। প্রথমত তার প্রশস্ত দেহ, বড় চোখ, চওড়া বুক দেখে মনে হয় না সে এ বাড়ির কেয়ার টেকার।

লোকটি একটা রুম এ আমাকে নিয়ে গেলো আর বললো এখানে থেকে যেতে পারো। ঘরটি মাঝারি আকারের একপাশে একটি সুদৃশ্য পালঙ্ক তাতে বিছানো বাদামি মখমলের চাদর বিছানো। ঘরের আরেক পাশে একটি ছোট ভিক্টোরিয়ান আমলের ধাতে গড়া একটি ছোট টেবিল আর চেয়ার। লোকটি চলে গেলে কিছুক্ষণ শুয়ে থাকলাম পালনকে, ঘুম আসছে না। তাই ভাবলাম লোকটির সাথে একটু গল্প করে আসি। বাসাটি কার, সে কবে থেকে এখানে আছে এইসব জানার চেষ্টা করবো। সামনে এগুতেই খুঁজে পেলাম তাকে, লোকটি আমার সাথে ঐ কামরাটায় আসলো। তারপর জিজ্ঞাসা করলাম “চাচা আপনি এখানে কতদিন ধরে থাকছেন? আপনার বাসায় কে কে আছে?”

লোকটি একটু অদ্ভুত ভাবে হেসে বললো “কেউ নেই আবার সবাই আছে।” কথাটি শুনে অন্য রকম লাগলো। তারপর তাকে জিজ্ঞেস করলাম “এই বাড়ির মালিক কে ছিল? আর তাদের বংশধর কেউ থাকে না এখানে?” তিনি বললো “সব বলছি… এই বাড়িটা ছিলো মুহাম্মদ বিন উসরফ শাহ এর বাড়ি। সে ছিল মুঘলদের উত্তরসূরী।” তার জীবনযাপন, দাপট, প্রতিপত্তি, উত্থান, এই সব সম্পর্কে একে একে বলতে লাগলো। সব সোনার পর জিজ্ঞেস করলাম “সে মারা গেলো কিভাবে?” আবারও বৃদ্ধ হাসলেন, “রাজা তার স্ত্রীকে খুব ভালোবাসতেন, তার স্ত্রীও তাকে খুব ভালোবাসতেন। খুব ভালো সময় তারা কাটাচ্ছিলেন। তবে  একদিন রাজা জানতে পারেন তার স্ত্রী তাকে ঠকাচ্ছে। সে আসলে অন্য একজনকে ভালোবাসে!!!

করোনার বিকালে

মো: সাহেল চৌধুরী
শিক্ষার্থী, অনার্স প্রথম বর্ষ, আনন্দ মোহন কলেজ, ময়মনসিংহ।

“ভয়েস অফ হ্যালো”র ফেসবুক ক্লিক করুন

“ভয়েস অফ হ্যালো”র ইউটিউব ক্লিক করুন

[শিশুরাই তুলে ধরবে শিশুদের অধিকারের কথা, আপনিও লিখুন আপনার কথা। লেখা পাঠানোর ঠিকানা [email protected]]

Comments are closed.