চলতি বছরের এসএসসি, দাখিল ও সমমান পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ হতে আর মাত্র কয়েকদিন বাকী রযেছে। দীর্ঘ দশ বছরের পরিশ্রমের সাধনায় তিল তিল করে গড়ে তোলার চোখের হাজারো স্বপ্নের প্রত্যাশিত ফল। এ ফলাফলের জন্য তাকিয়ে থাকে পরিবার সকলের স্বপ্ন, আশা ও ভরশা। এছাড়া প্রতিবেশীরাও ফলাফলের জন্য অপেক্ষা করেন।
যেসকল শিক্ষার্থীদের আশানুরূপ ফলাফল আসবে তাদের সকলের জন্য অগ্রিম শুভেচ্ছা ও আগামী পথে সাফল্যের জন্য দোয়া রইল। তবে হয়তো কারো সামান্য ভুলের কারণে আশানুরূপ ফল আসবে না। ফলাফল খারাপ হওয়া বা অকৃতকার্যে মন খারাপের কিছু নেই।
অকৃতকার্য মানে জীবন শেষ হয়ে যাওয়া নয়, এ ফলাফলের চেয়ে তোমার জীবনের মূল্য লক্ষগুণ বেশি। জীবন থাকলে একদিন সাফল্য আসবেই। ব্যর্থতা মানে হেরে যাওয়া নয় নতুন করে প্রস্তুতি নেওয়া সুযোগ আসে। জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত জীবনের প্রতিটা ধাপই হচ্ছে যুদ্ধক্ষেত্র, এতে জয় পরাজয় দুটোই থাকবে। পরাজয় যদি না থাকতো তাহলে জয়ের কোন মূল্যই থাকতো না।
পরাজয়ে যদি জীবনের সমাপ্তি হতো তাহলে বিশ্বের এত বড় বড় অর্জন আসতো না। জীবনের যেখানে ব্যর্থতা দিয়ে শেষ, সেখানে শেষ থেকেই নতুন করে আবারও শুরু করতে হবে। কোন পরিস্থিতিই এক জায়গায় স্থির থাকে না আজকে খারাপ হয়েছে তাতে কি আগামীদিনে এ চেয়েও ভালো কিছু হবে আর ব্যর্থতা মাঝেই মানুষ সফলতা অর্জন করে।
সমাজের মানুষ কী বললো বা ভাবলো একথা ভেবে নিজেকে কষ্ট দেওয়া মোটেও বুদ্ধিমানের কাজ নয়। অকৃতকার্য মানেই ইজ্জ্বত শেষ? বন্ধুদের মাঝে কিভাবে মুখ দেখাবো বা অনন্যরা অনেক সমালোচনা করবে।
আমাদের সমাজে এক শ্রেণী লোক আছে যারা নিজে ভালো কিছু করতে পারবে না বরং অন্যরা চেষ্টা করে হেরে গেলেও তাদেরকে নিয়ে সমালোচনা করে। তোমার কি মনে হচ্ছে আত্নহত্যা করলেই সকল কিছু সমাধান হবে!
পরিবারের প্রত্যেকটি সদস্য সফলতার চেয়েও তোমাকে বেশি ভালোবাসে, যদি তুমি কোন সময় পিতা-মাতার চোখের আড়াল হয়েছো তাহলে কতটা চিন্তিত হয়ে পরে তা কি জানো? সন্তান পিতা-মাতার কাছে কতটুকু মূল্যবান সেটা সন্তানবিহীন পিতা-মাতা জানে।
আমরা কি কখনো খেয়াল করেছি আমাদের সামান্য অসুস্থ হলেও তারা কতটুকু অস্থির হয়ে পরে কবে সুস্থ হবো এবং সুস্থতার জন্য সৃষ্টিকর্তার কাছে দিনরাত প্রার্থনা করে। আর সেই তুমি সামান্য ফলাফল খারাপে কারণে আত্মহত্যা করতে চাও! একবারেও কি পিতা-মাতার কথা ভেবে দেখেছো? শুধু একটি ভুল সিদ্ধান্তে কারণে তোমার পরিবারের নেমে আসবে অন্ধকার, বাতাসে ধুলি কণার মতো উড়ে যাবে শান্তি নামের শব্দটি। পরিবারের সকলের ভবিষ্যতে সুখ-স্বপ্ন নষ্ট হয়ে যাবে।
আমরা সকলেই জানি ব্যর্থতার পরে ইতিহাসের পাতায় সুনামে সাথে সাফল্য অর্জন করেছে অনেকেই। রাজা রবার্ট ব্রুস যুদ্ধে বার বার পরাজিত হওয়া পর সপ্তমবারে জয়লাভ করেন, আব্রাহাম লিংকন অনেকবার নির্বাচন হেরে গিয়ে শেষ বয়সে নির্বাচিত হোন, কবি শেখ সাদি যার জ্ঞানের মূল্যবোধে সম্মানিত মর্যাদা পেয়েছেন। টমাস আলভা এডিসন ছিল এক মেধাহীন শিশু। যে মায়ের অনুপ্রেরণায় হয়ে উঠে যুগের সেরা মেধাবী।
বাস্কেট বলের খেলোয়াড় হিসেবে জর্ডানের নাম নোটিশ বোর্ডে নাম ছিলো না। মায়ের অনুপ্রেনায় জর্ডান দিন রাত প্রাকটিস শুরু করেন। অবশেষে ‘প্রতিভাহীন’ জর্ডান একপর্যায় হয়ে ওঠে সর্বকালের সেরা খেলোয়াড়।
আমাদের বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম কঠিন দারিদ্র্য মাঝে বড় হয়েও লেখাপড়া তেমনভাবে সুযোগ না পেয়েও, মেধায় সবোর্চ্চ ও জাতীয় কবি আসন অর্জন করেছেন।
এছাড়া সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব, নবী ও রাসুল হযরত মোহাম্মদ সা. সত্যের আলো ও ধর্ম প্রচার করতে বারবার অমানবিক নির্যাতিত হয়েছেন। তবুও পিছুপা না হয়ে প্রত্যাশা ও আত্মাবিশ্বাসের সাথে সামনের দিকে এগিয়ে চলেন এবং অবশেষে সাফল্য অর্জন করেন। সেই নবী ও রাসুলের উম্মত হয়ে অকৃতকার্য হওয়ার কারণে নিজের জীবনকে ধ্বংস করা মোটেও ঠিক নয়।
এ উক্তিটি মনেআছে কি,
“পারিবো না’–এ-কথাটি বলিও না আর,
কেন পারিবে না তাহা ভাবো একবার;
পাঁচজনে পারে যাহা,
তুমিও পারিবে তাহা,
পারো কি না পারো করো যতন আবার
একবার না-পারিলে দেখো শতবার”
পূর্বের ব্যর্থতার ব্যথায় শেষ না হয়ে নতুন করে আবারও চেষ্টা করো। তাদের মতো তুমিও নিজের প্রতি বিশ্বাস রেখে জয়ের জন্য সামনের দিকে এগিয়ে চলো। পরীক্ষায় ফলাফল কারো ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করতে পারে না। সেই তো সবচেয়ে মেধাবী যে সকল পরিস্থিতি ধৈর্য্যের সাথে মোকাবেলা করে সাফল্য অর্জন করে। নিজকে নিয়ে গর্ববোধ করে না।
মহান সৃষ্টিকর্তা সুন্দর জীবন দিয়েছে তাই আমরা সকলই নিজের জীবনকে যথারীতি মূল্যায়ন করি, প্রত্যেক জীবনই মহামূল্যবান। সবচেয়ে বড় কথা আদর্শবান মানুষ হওয়ার চেষ্টা করি, তবেই দেশ ও জাতির কল্যাণ আসবে।
মো: সোহেল রানা
শিক্ষার্থী, ডিপ্লোমা ইন ইলেকট্রিক্যাল, উত্তরা ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ, ঢাকা।
“ভয়েস অফ হ্যালো”র ফেসবুক ক্লিক করুন
“ভয়েস অফ হ্যালো”র ইউটিউব ক্লিক করুন
[শিশুরাই তুলে ধরবে শিশুদের অধিকারের কথা, আপনিও লিখুন আপনার কথা। লেখা পাঠানোর ঠিকানা [email protected]]
Comments are closed.