কনকনে কুযাশার দিন। ঢাকায় সবে সকাল হয়েছে! বুঝতেই পারছেন শীতের সকাল- বিছানা থেকে উঠার নামই হয় না। তবুও শরীরে গরম কাপড় পড়ে বিদ্যালয়ে ক্লাসের জন্য অপেক্ষায় বেশ হাফ শতেক শিক্ষার্থী। একটু পর ক্লাস শুরু হবে তাই অন্যদের মতো আফরানও বসে আছে। সেই ক্লাস টেনে পড়ে।
পড়ালেখায় তেমন ভালো না বললেও চলে। এই তো আগের ক্লাসের বার্ষিক পরীক্ষায় এক বিষয়ে ফেল করেছিলো সে। মামার অনুরোধে স্কুল কতৃপক্ষ তাকে ক্লাস টেনে পড়ার সুযোগ দেয়। তবে বাঁধা ছিল অনেক শর্ত। যদি টেনের কোন পরীক্ষায় ফেল করে তবে তার আর কোন অনুরোধ কাজে আসবে না। আফরানের মামা শর্তগুলো সংকোচে মেনে নেয় যার ফলশ্রুতিতে তার ক্লাস টেনে পড়ার সুযোগ হয়।
তবে ক্লাস টেনের অর্ধ-বার্ষিক পরীক্ষায় গত বার্ষিক পরিক্ষার চেয়ে আরও এক বিষয়ে ফেল করেছে অর্থাৎ মোট এভাবের পরীক্ষায় মোট দু-বিষয়ে ফেল করেছে। এখন আর তো উপায় নেই! নিশ্চয়ই প্রধান শিক্ষক স্কুল থেকে বের করে দিবেন! এদিকে প্রধান শিক্ষকের নিঃ সংকোচ কথা -যারা ফেল করেছে তাদের আর বিদ্যালয়ে রাখা যাবে না! কিন্তু কথাই আছে না, কোথাকার জল কোথায় গিয়ে গড়াই!
এই পরীক্ষায় স্কুল সভাপতির ছেলেও ফেল করেছে। যার ফলে তার ছেলেকে সুযোগ দেওয়ায় সবাইকেও সুযোগ দেওয়ার প্রস্তাব করেন। সেই জন্য আফরানও সুযোগ পাই। এভাবে বার বার রিকুয়েষ্ট করে পাশ করা তার কাছে খারাপ লাগতো। তবে পড়ালেখা তার ভালো লাগতো না যার ফলে এসব তার কাছে সাময়িক মনে হত। এভাবে কেটে যায় ছয় ছয়টা মাস…।
আজ তার টেস্ট পরীক্ষার রেজাল্ট দিবে। আফরান ক্লাসে চুপ করে বসে আছে। কারো সাথে কোন কথা বলছে না। আগের বন্ধুদের সাথেও তেমন আড্ডাও দিচ্ছে না। একদম শান্ত হয়ে রয়েছে। তাই তার বন্ধুরা ভেবে পাচ্ছে না ক্লাসের দুষ্ট ছেলেটা কিভাবে এত নীরব হয়ে গেলো? কি জন্যই এতো অন্যরকম হয়েছে সে? এসব কারও মাথায় ডুকে না। তাই আর কেউ তার ব্যাপারে মাথা ঘামাই না।
প্রথম ক্লাস শুরু হলো, ক্লাস টিচার এসে সবার উদ্দেশে বললেন আজ তোমাদের ফলাফল প্রকাশ হবে। কি অনুভূতি হচ্ছে তোমাদের? কেউ কিছু বলছে না! অন্য সময় এতক্ষণে আফরান স্যারকে পাগল করে ছাড়তো তবে এবার ছেলেটা কিছু বলছে না।
এমন অবস্থা দেখে আফরানের উদ্দেশ্যে স্যার বললেন, আচ্ছা আফরান কি খবর তোমার? এইবার পাশ করবে তো? আফরান: জানি না স্যার!
দ্বিতীয় ক্লাসেই তোমাদের ফলাফল! হয়ত তোমার জন্য খারাপ সংবাদ আসতেছে (একটু রহস্যময় করে বললেন)
আফরান চুপ করে বসে পড়লো বেঞ্চে। স্যারও কথা বাড়ালেন না। ক্লাস শেষ করে চলে গেলেন। একটু পর রাফি স্যার আসলেন। এসেই ফলাফল প্রকাশ করতে লাগলেন। যারা দু-বিষয়ে ফেল করেছে প্রথমে তাদের নাম বললেন তিনি! তবে কয়েকজনের নাম থাকলেও আফরানের নাম সেই।
এবার যারা এক বিষয়ে ফেল করেছে তাদের নাম প্রকাশ করলেন, তবে এখানেও আফরানের নাম নেই! অনেকের ধারণা হয়েছে আফরান হয়তো এরচেয়ে বেশি বিষয়ে ফেল করেছে।
এবার স্যার পাশকৃত শিক্ষার্থীদের নাম প্রকাশ করলেন প্রথম তিন স্থান অধিকারী ছাড়া! এরপর স্যার তৃতীয় থেকে উল্টো ফল দিতে লাগলেন। তৃতীয় হয়েছে নওশাহ, দ্বিতীয় শান্তি আর প্রথম হয়েছে একটু নিশ্বাস নিলেন! স্যার এবার বললেন তোমাদের মাঝে এবারের পরীক্ষায় প্রথম স্থান অধিকার করেছে আফরান নেওয়াজ!
কথা শুনে সাথে সাথেই চমকে উঠল আফরান। ক্লাসের সবার চোখ কপালে। কেউ বিশ্বাস করতে পারছে না! ফলাফল প্রকাশ করার পর স্যার ক্লাস শেষ করে চলে গেলেন। এভাবে বাকি সব ক্লাস শেষ হয়! স্কুল ছুটি। আনন্দঘন মন নিয়ে বাড়ি ফিরল আফরান। তবে ফেরার পর নিমিষেই তার মনটা দুঃখে ব্যতিত হয়ে উঠে। কারণ তার খুশিটা যাকে বলবে সেই হল তার মামা। তবে তার মামা তো আর নেই, দুমাস আগেই চলে গেলেন নাফেরার দেশে! এই আনন্দময় দিনে বাসায় মামাকে না পেয়ে ব্যাগ রেখে নদীর তীরে ছুটে যায়।
আজ নদীর পানি স্তব্ধ হয়ে গেছে। প্রকৃতি নিরস। হয়ত প্রকৃতিও তার দুঃখ ভোগ করতে চায়। আনমনে আফরান মনে একা একা বলতে লাগল, মামা তুমি কি দেখছো না আমি পরীক্ষায় প্রথম হয়েছি। মামা তুমি জান না আমি আর এখন দুষ্টমি করি না, শান্তি হয়ে গেছি। মন দিয়ে পড়ি এখন! তুমি কি আসবে না?
আমার ফলাফল শুনে আমায় হাত বুলিয়ে জড়িয়ে নিতে? আফরান কথাগুলো চিৎকার করে বলতে থাকে কিন্তু কথাগুলোর কোন প্রত্যুত্তর নেই। তাই সেই প্রশ্ন গুলো মুক্ত হাওয়ায় উড়ো চিঠির মাধ্যমে অচিন মামার ঠিকানায়।
দেখতে দেখতে সন্ধ্যা ঘনিয়ে এলো। আফরান ফিরলো তবে সেই ফেরাটা অন্য দিনের মতো নই। এই ফেরাটা শত আনন্দের মাঝে হাজারো কষ্ট বুকে নিয়ে ফেরা! যার পুরোটাই ছিল স্মৃতি..!
মো: আরমান
শিক্ষার্থী, দশম শ্রেণি, পেকুয়া সরকারি মডেল জি এম সি ইনষ্টিটিউশন, কক্সবাজার।
“ভয়েস অফ হ্যালো”র ফেসবুক ক্লিক করুন
“ভয়েস অফ হ্যালো”র ইউটিউব ক্লিক করুন
[শিশুরাই তুলে ধরবে শিশুদের অধিকারের কথা, আপনিও লিখুন আপনার কথা। লেখার পাঠানোর ঠিকানা [email protected]]
Comments are closed.