গণপরিবহনের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের বৈরিতা দিন দিন ভয়াবহ আকার ধারণ করছে। সেই আগুনে আবার পানি ঢালল পরিবহন মালিক সমিতি। তাতেও কোনো সুরাহা হবে বলে মনে হয় না। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে অবশেষে গণপরিবহনে হাফ ভাড়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তবে সেটি শুধু রাজধানীর শিক্ষার্থীদের জন্য।
এখন প্রশ্ন উঠেছে- সারাদেশে যে এত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও শিক্ষার্থী, তাদের অপরাধ কী? তারা কেন হাফ ভাড়া দিতে পারবেন না? এ ব্যাপারে পরিবহন মালিক সমিতির যুক্তি হচ্ছে- রাজধানীতে আন্দোলন হয়েছে। তাই এখানে কার্যকর হবে। ফলে জনমনে প্রশ্ন উঠেছে, তা হলে কি সারাদেশেও আন্দোলন করতে হবে?
বিভিন্ন গণমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে, আন্দোলন-অবরোধ শেষে গণপরিবহনে শিক্ষার্থীদের জন্য হাফ ভাড়া নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাস মালিক সমিতি। গত ৩০ নভেম্বর ধানম-িতে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে ঢাকা মহানগর শাখা এবং সহযোগী সংগঠনের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকদের যৌথ সভায় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এ কথা বলেছেন।
এদিকে ১ ডিসেম্বর থেকে গণপরিবহনে হাফ ভাড়া কার্যকরের কথা জানিয়েছিলেন, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্যাহ। একই দিন সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, সকাল ৭টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত হাফ ভাড়া দেওয়া যাবে। তবে ছুটির দিনে হাফ ভাড়া দেওয়া যাবে না।
আমরা জানি, নীতিনির্ধারণী অনেক সিদ্ধান্ত রাজধানী থেকেই হয়ে থাকে। তা হলে এবারের সিদ্ধান্ত সারাদেশের জন্য কেন কার্যকর নয়? উপজেলা-জেলা শহরের শিক্ষার্থীরা বেশিরভাগই নিজের বাড়ি থেকে গিয়ে পড়াশোনা করেন। তাদের জন্য হাফ ভাড়া কেন প্রযোজ্য হবে না? তা হলে কি তাদেরও রাস্তায় নামতে হবে? পরিবহনে শিক্ষার্থী নিগ্রহের মতো ঘটনা শুধু রাজধানীতেই ঘটে না। অনেক জেলা-উপজেলা শহরের পরিবহনেও ঘটে থাকে। তখন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে স্থানীয় পরিবহন শ্রমিক নেতাদের সঙ্গে বসে সুরাহা করা হয়।
একটি বিষয় আমরা কি ভাবতে পারি না যে, রাজধানীর এ শিক্ষার্থীরা সারাদেশেরই প্রতিনিধিত্ব করেছেন। রাজধানীতে পড়াশোনা করা শিক্ষার্থীর ভাই-বোন কেন মফস্বলে থেকে এ সুবিধা পাবেন না? মফস্বলের শিক্ষার্থীদের তা হলে করণীয় কী? সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ইতোমধ্যে এ বিষয়ে তীব্র সমালোচনা হচ্ছে। কবি, লেখক, সাংবাদিকসহ সচেতন মহল প্রতিবাদ জানাতে শুরু করেছেন।
সবার একই প্রশ্ন- সারাদেশের জন্য এ সিদ্ধান্ত কেন প্রযোজ্য নয়? ঢাকার বাইরের শিক্ষার্থীরা কি তা হলে ধনী? এমনকি রাজধানীর গণপরিবহনগুলোয় শিক্ষার্থীদের জন্য অর্ধেক ভাড়া কার্যকরের ঘোষণায় খুশি নন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরাও। তারা সারাদেশের গণপরিবহনে শিক্ষার্থীদের হাফ ভাড়া কার্যকর দেখতে চান।
নর্থসাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আয়াত উল্লাহ হাসনাত একটি গণমাধ্যমকে বলেছেন- ‘যে ঘোষণা এসেছে, তা দায়সারা গোছের। আমরা সারাদেশে হাফ পাস চাই এবং এ নিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করতে হবে, মুখের কথা বিশ্বাস করি না।’
এ ছাড়া আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা এমন ঘোষণায় অন্তত দুটি সীমাবদ্ধতা দেখেছেন। প্রথমত, হাফ পাস শুধু ঢাকার ভেতরে কার্যকর করার ঘোষণা এবং দ্বিতীয়ত, ছুটির দিনে এ সুবিধা কার্যকর না থাকা। শিক্ষার্থীদের প্রশ্ন, ঢাকার বাইরের শিক্ষার্থীদের কি তা হলে ধনী ভাবা হচ্ছে? তারা আরও প্রশ্ন তুলেছেন, ছুটিতে শিক্ষার্থীদের ছাত্রত্ব চলে যায় কি না। এও জানা গেছে, এ ঘোষণায় তারা আন্দোলন থেকে সরে আসবেন না। এ নিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করতে হবে। ৭ ডিসেম্বর সংসদে তাদের স্মারকলিপি দেওয়ার কথা রয়েছে। সে কর্মসূচি অপরিবর্তিত থাকবে।
অন্যদিকে নিরাপদ সড়ক ও গণপরিবহনে অর্ধেক ভাড়ার দাবিতে চট্টগ্রামেও বিক্ষোভ করেছেন শিক্ষার্থীরা। তারা ঢাকার মতো সারাদেশের শিক্ষার্থীদের জন্য অর্ধেক ভাড়া চালুর দাবি জানিয়েছেন। অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে, শুধু রাজধানীকেন্দ্রিক সিদ্ধান্ত আদৌ যৌক্তিক নয়। সারাদেশের শিক্ষার্থীদের রাস্তায় নামানোর মতো হঠকারী সিদ্ধান্ত না নেওয়াই ভালো ছিল। দেশের নীতি-নির্ধারকরা এ বিষয়ে গভীরভাবে ভেবে দেখতে পারতেন। দিন দিন পরিবহন শ্রমিকদের হাতে জিম্মি হয়ে যাওয়া শুভ লক্ষণ নয়।
আমরা চাই, দেশের সব জায়গার শিক্ষার্থীর জন্য এক নিয়ম কার্যকর হোক। রাজধানী বা মফস্বলের মধ্যে কোনো বিভেদ কাম্য নয়। আশা করি, সিদ্ধান্ত গ্রহণকারীরা বিষয়টি ভেবে দেখবেন। পুনরায় আলোচনা করে সুষম সিদ্ধান্ত নেবেন। সারাদেশের শিক্ষার্থীদের যেন রাস্তায় নেমে আন্দোলন ও অবরোধ করতে না হয়। তা হলে সারাদেশ অচল হয়ে যাবে। রাষ্ট্রই তাতে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বিরূপ আচরণ কখনই কাম্য নয়। শিক্ষার্থীদের জয় হোক, জয় হবেই। সূত্র: আমাদের সময়
লেখক: সালাহ উদ্দিন মাহমুদ
কথাশিল্পী ও সাংবাদিক, জাগোনিউজ২৪.কম।
“ভয়েস অফ হ্যালো”র ফেসবুক ক্লিক করুন
“ভয়েস অফ হ্যালো”র ইউটিউব ক্লিক করুন
[শিশুরাই তুলে ধরবে শিশুদের অধিকারের কথা, আপনিও লিখুন আপনার কথা। লেখা পাঠানোর ঠিকানা [email protected]]
Comments are closed.