“তিনি ওর জন্মদাতা কিন্তু বাবা নন” এভাবেই বলছিলেন পুলিশ অফিসার বন্ধু। ছেলেটাকে মদ খেয়ে রাস্তায় মাতলামির কারণে গ্রেফতার করা হয়েছে। মাতলামি করে অনেকজনকে মারধরও করেছে। বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ব্যাবসায়ীর ছেলে তিনি। তবে দেখে চেনার পরে বন্ধুকে বলেছিলাম একে ধরে এভাবে বেঁধে রেখেছেন কেন? সে তো অমুক সাহেবের ছেলে।
উত্তরে বন্ধু বলেছিল, “তিনি ওর জন্মদাতা কিন্তু বাবা নন”। বাবা-মা হতে হলে যোগ্যতার প্রয়োজন। রাস্তার পাগলীও মা হয়, সেই সন্তানের বাবা হয় না কেও। তুমি একে তার সন্তান বললেও আমি বলবো এটা কুফল।
অবাক চোখে বললাম, কুফল মানে! এটা ওই শিক্ষাবিদের তার স্ত্রীর সাথে আনন্দের ফলে অসতর্কতা বসত চলে আসছে তাই কুফল। সন্তান হলে তার প্রতি দ্বায়িত্ব পালন করতেন, সন্তান কে সুশিক্ষা দিতেন।
তারা সন্তান জন্মের পরে আয়ার কাছে রাখে, নিজের কোলে জায়গা হয় না। বৃদ্ধ হলে তাদের ঘড়ে যায়গা হবে কেন! তারাই তো বৃদ্ধাশ্রমের আদব ছোটবেলায় শিখিয়ে দেয়। আমি দীর্ঘশ্বাস ফেলে তার মুখের দিকে তাকালাম, তার মুখের বিরক্তি ভাব দেখে মনে হলো “এই বিরক্তি সারা পৃথিবীর সকল অসচেতন বাবার প্রতি”।
এদিকে কখন যে কফি দিয়ে ছেলেটা দাঁড়িয়ে রয়েছে তা বুঝতেই পারি নাই। অবশেষে তিনি বললো, স্যার কফি ঠান্ডা হয়ে যাবে। আমি বললাম, তোমার স্যারের মেজাজের তাপে কফির মতো আমিও গরম হয়ে গেছি। তুমি যাও। এই ধর কফি নে, মেজাজ দেখিয়ে লাভ নেই, সমাজ এভাবেই চলছে।
সে রাগে কটমট করতে করতে বলল, এভাবে চলছে বলেই জেলখানায় বিজন্মা দিয়ে ভরে গেছে। বুঝলি তাপস, জন্মদাতা ও বাবার মাঝে অনেক পার্থক্য। বাবা শব্দ টা আমার কাছে অনেক পবিত্র কিন্তু যারা জন্ম ও মৌলিক কিছু চাহিদা মিটিয়ে দিয়েই দ্বায়িত্ব শেষ মনে করে। আবার বড়লোক হলে টাকা, আয়া ও কিছু গৃহশিক্ষক দিয়েই দ্বায়িত্ব পালন শেষ মনে করে তাদেরকে আমার বাবা মনে হয় না।
চোখ বন্ধ করে চেয়ারে হেলান দিয়ে সে আবারও কলতে শুরু করল, তুই এতো টাকা কার জন্য করেছিস, তোর যা রয়েছে তা বিক্রি করে খেয়েও তুই তোর জীবন কাটিয়ে দিতে পারবি? তবে এতো সম্পদ কি দরকার? শুকনো মুখে বললাম, সম্পদ না করলে আমার সন্তানের কি হবে!
তবে কথা শেষ না করতেই সাথে সাথে মুখের কথা কেড়ে নিয়ে সে বললো, কিন্তু তুই তো ওর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সম্পদটি নষ্ট করতেছিস। সম্পদ দিয়ে কি হবে? চোখের দিকে হা করে তাকিয়ে বললাম, মানে? হাসতে হাসতে ও বলল, মানে তেমন কিছু না। তোর বাবু টার বয়স যেন কত হলো? ৬ মাস না? বললাম হ্যাঁতবে তাতে কি?
তবে সাথে আবারও সে বলল, স্কুলে দিয়েছিস? স্কুলে কি শেখে তার খবর শেষ কবে নিয়েছিস? ওর বন্ধুরা কে কোথায় থাকে, কার বাবা কে, ও ঠিক মতো পড়তেছে কিনা খবর রাখিস? স্কুলের শিক্ষক দের সাথে কখনো ওর বেপারে কথা বলিস? বাড়ির সামনে মাঠে ওকে নিয়ে কখনও হাটাহাটি করিস? কাচুমাচু করতে করতে বললাম, ইয়ে মানে, না আসলে…। তবে সাথে সাথে ধমক দিয়ে বলল, না তো করলি কিন্তু কোনটা না করলি? আমি অপরাধীর কন্ঠে বললাম, সবগুলোই তো না।
সে কান্না ও রাগের মিশ্রিত এক অবাক, মায়াময় ও ভারাক্রান্ত নাকি রাগী কন্ঠে বলতে শুরু করলো, আমি ওর কন্ঠ চিনলাম না। তোর যদি সবগুলোর উত্তর “না” হয় তবে তুই সন্তানের কাছে কি আশা করিস?
আমি চিন্তিত মুখে ওর দিকে তাকিয়ে রইলাম। আমার দিকে তাকিয়ে বলল, তুই কি কফি টা খাবি, না খেলে চলে যা, আমার খুব কষ্ট হচ্ছে। আর মনে রাখিস, “বাবা হওয়া ততটাও সহজ না”।
লেখক: মো: তহিদুল ইসলাম তাপস,
তরুণ বিজ্ঞানী ও পরিবেশ পদক প্রাপ্ত।
“ভয়েস অফ হ্যালো”র ফেসবুক ক্লিক করুন
“ভয়েস অফ হ্যালো”র ইউটিউব ক্লিক করুন
[শিশুরাই তুলে ধরবে শিশুদের অধিকারের কথা, আপনিও লিখুন আপনার কথা। লেখা পাঠানোর ঠিকানা [email protected]]
Comments are closed.